শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন

১০৩ টাকায় পু‌লি‌শে চাক‌রি পে‌লো খোকসার স‌ঞ্চিতা!

মোমিন ইসলাম / ৫২৭ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৪৮ পূর্বাহ্ন

সারা দেশের মতো কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবার কুষ্টিয়া থেকে নেওয়া হলো ৪১ জনকে। মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা পূরণ করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) চূড়ান্ত ঘোষণাও দেওয়া হয়। দুপুরে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খাইরুল আলম তার কার্যালয়ের সামনে এই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেন।

লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে আর মামা-খালুর জোর না থাকলে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায় না! এমন কথা লোকমুখেই বেশ প্রচলিত। তবে এবারে তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কুষ্টিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে ৪১ জনের চাকরি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ১৬৪০ জন চাকরি প্রত্যাশী অংশ নিলেও লিখিত পরীক্ষায় দিয়েছেন মাত্র ৩০০ জন। এর মধ্য থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয় ৪১ জনের নাম। স্থান পায় ৫ নারীও।

৫ নারীর মধ্যে খোকসা উপজেলার মাঠপাড়া গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান সুলতানা আক্তার সঞ্চিতা।

বাবা সুলতান হাসানের অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। দুই বোনের মধ্যে সুলতানা আক্তার সঞ্চিতা বড়। অভাবের সংসারের হাল ধরার মতো কেউ নেই। বাবা সুলতান হাসানের অন্যের সিএনজি ভাড়ায় চালিয়ে দিনযাপন করেন। তার পক্ষে এ সংসার চালানো দায়। ছোট বেলা থেকেই পুলিশে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল সুলতানা আক্তার সঞ্চিতা। কিন্তু অভাবের সংসারে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার সেই সামর্থ্য নেই তার। এবার তিনি শুনেছেন চাকরিতে কোনো ঘুষ লাগবে না। পুলিশের এমন প্রচারণায় আবেদন করেছিলেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকেও উদ্বুদ্ধ করা হয় তাকে। শরীরিক ফিটনেস কিংবা মেধা দু’টিই ছিল তার। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল বেশ। মাত্র ১০৩ টাকায় হয়েও গেলো চাকরি।

আমার ছেলের পুলিশে নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি ভীষণ খুশি। এভাবেই আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়া মেধা তালিকায় ১ নং স্থান পাওয়া শাহাবুদ্দিন আহমেদের বাবা এসএমআর কিরণ।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর বিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা। দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় শাহাবুদ্দিন। গ্রামে নিজের বাড়ীর সাথেই ছোট এক মুদি দোকান নিয়ে সংসার পরিচালনা করেন তিনি।

তিনি বলেন,আমার ছেলে যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ছেলেকে পুলিশ বানাবো। পড়ালেখা করিয়েছি মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতে চেষ্টা করেছি। আমার ছেলে পুলিশে নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি ভীষণ খুশি।

পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, চাকরি পাওয়া ছেলে মেয়েদের অভিব্যক্তি শুনে আমি বিমোহিত হয়েছি। যারা চাকরি পেয়েছে তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। প্রকৃত মেধাবিরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে।

তিনি বলেন, সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই কুষ্টিয়া পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর