শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ার সাবিনার সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

মোঃ মোমিন ইসলাম, কুষ্টিয়া / ৩৫৫ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫০ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ায় মানবিক ও সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন এক সফল নারী উদ্যোক্তা সাবিনা শারমিন।কুষ্টিয়া শহরে বসবাস ৭ বছর বয়স থেকে হাঁটি হাঁটি পাপা করে, বাবার হাত ধরে উদ্যোক্তা জীবনে পা বাড়ানো শুরু হয় তার। সাবিনা সারমিন প্রথমে শুরু করেন হাতের তৈরী নকশীকাঁথার কাজ দিয়ে। জন্মস্থান বেড়ে ওঠা কুষ্টিয়া শহরের হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে, কুষ্টিয়া কবি আজিজুর রহমান স্কুল থেকে পিএসসি, কুষ্টিয়া সাইত্তিক মীর মোশারফ হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস,এসসি,

কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে এইচ,এস,সি এবং কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

সাবিনা শারমিন কুষ্টিয়ার খোকসার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম দুলালের স্ত্রী। তিনি একজন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী। দায়ীত্বে আছেন বিভিন্ন উদ্যোক্তা সংগঠনের। তিনি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের খোকসা উপজেলা অ্যাম্বাসেডর এবং সিডিএল ট্রাস্ট ও নারী ফোরামের সদস্য। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে সাবিনা শারমিনকে । তবে দমে যাননি। ২০১৫ সাল থেকে মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক নিয়ে কাজ করে আজ সে সফল । শুরুতে ব্যবসায়ের মুলধন ৫০০০ টাকা হলেও বর্তমানে তার ব্যবসায়ের মুলধন বহুগুণে বেড়েছে। নিজস্ব পরিমণ্ডলে তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। ইন্ডিয়া থেকে মেয়েদের থ্রী পিচসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেন শারমিন। সফল এই নারী উদ্যোক্তা সম্প্রতি মুখোমুখি হন প্রতিবেদক এর।

প্রতিষ্ঠানের নাম সাবিনা বুটিক হাউজ, সমাজের কর্মজীবী নারীদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী তিনি।এই প্রতিষ্ঠানের মূল সিগনেচার নকশী কাথা, নকশী চাদর,পুশনপুশন কভার,শাড়ী, ওয়ান পিচ-টু পিচ থ্রি-পিচ,ওড়না,মশারী, চাদর,ব্লক বাটি,রঙ এবং ডাইস এর কাজ,এছাড়া ও চুমকি বুথি,তাতীদের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন।

এই উদ্যোক্তার যাত্রা শুরুর গল্পটা জানালেন সাবিনা, শুরু হয়েছিলো ১৬ ডিসেম্বর , ২০১৫ সাল। ১৯৭৩ সালে মহান স্বাধীনতার স্থাপিত বাঙালী জাতির অনুপেরনা শেখ মুজিবর রহমানের শীত নিবারনের জন্য একটা তুলার জামা পেয়ে তার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের যাত্রা শুরু করেন তিনি।উদ্যোগটি শুরু করার জন্য একটি বিশেষ দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। এই বিশেষ দিনটি হলো “মহান বিজয় দিবস”।

পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। কিন্তু এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে৷ তেমনি একজন সাবিনা শারমিন।

সাবিনা বলেন, হাতের কাজের কদর সবসময়ই থাকে এটা বলতেই হয়। কিন্তু আমার এই উদ্যোগ শুরু করার আগে আমি অনেকটা সময় নিয়ে বাজার বিশ্লেষণ করি। যার ফলে উদ্যোগের শুরু থেকেই খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। কেননা ভিন্নধর্মী কাজের সংমিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা ছিল আমার। যার ফলে আমার প্রধান ক্রেতা মূলত নারীরা। বিশেষ করে ১৫-৪০ বছর বয়সী নারী।

 

সাবিনা শারমিন বলেন, আমার বাবা মরহুম রুস্তম আলী ছিলেন একজন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ব্যবসায়ীক কর্মকান্ড দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি। তখন থেকেই আমি নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হওয়া মাত্রই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সংসার সামলিয়ে অনেক বড় পরিসরে ব্যবসা বা এ জাতীয় কিছু করা সম্ভব হয়নি। তারপরও বিয়ের পর যখন আমি গ্রামে থাকতাম তখন আমি হাঁস,মুরগি সহ বিভিন্ন গবাদিপশু লালনপালন করতাম। একটা সময় স্বামীর চাকুরীর কারণে আমি শহরে চলে আসি। শহরে সন্তানদের সামলিয়ে আমি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে থাকি। পরবর্তীতে সন্তানরা বড় হলে ২০১৫ সালে আমি আমার সাবিনা বুটিক্স হাউজের যাত্রা শুরু করি।

ভালো লাগার বিষয় এটি যে, আমাদের পুরনো ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। এবং দিন দিন নতুন ক্রেতার সংখ্যা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আর্থিক লাভের কথাও জানালেন সাবিনা। বর্তমানে মাসে ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি প্রতিমাসে। তিনি বলেন আমাদের হাতের কাজের ধরন আমরা চাইলেও অতিরিক্ত অর্ডার নিতে পারি। তবে বড় পরিসরে আমাদের উদ্যোগ পরিচালনার কাজ চলছে। এই কাজের চাহিদা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একজন নারী হয়েও এই পর্যায়ে আসতে কতটা বেগ পেতে হয়েছে? সাবিনা শারমিন : আমি কাজকে সব সময় পছন্দ করতাম। আমার কাজ খুব ভালো লাগতো আর ছোট থেকেই ভাবতাম আমি নিজে কিছু করব। আমার প্রতিষ্ঠান থাকবে। আমার লক্ষ্য অটুট ছিল, আমি শত বাধা অতিক্রম করে আমার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আর এক্ষেত্রে আমার স্বামী সবসময় আমাকে সহযোগীতা করেছে। আমি এখন সফল। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই এখন পরিশ্রম করছি বাকিটা জীবন পরিশ্রম করব।

সাবিনা বলেন,অনেক চড়াই পাড়ি দিয়ে গড়েছি একটি নিজের জেগে দেখা স্বপ্ন, নিজের নামে নিজের পরিচয়টা তৈরি করে গড়েছেন ১৫ সাল থেকে নিজের প্রতিষ্ঠান যার নাম সাবিনা বুটিক হাউজ, তিনি বলেন শিক্ষার কোনো বয়স নাই,অন্যের জন্য কাজ করলে নিজের জন্য কাজের অভাব হবে না। তাই শুরু করুন ছোট করে,স্বপ্ন দেখুন বড় করে।সমাজে একটি নারী ও বেকার থাকবে না। তিনি বলেন নারীরা স্বাবলম্বী হলে দেশ, সমাজ, সংসার, সকলে মিলে ভালো থাকবে, উন্নয়নশীল দেশ গড়তে আমাদের আরো উদ্দ্যোক্তা লাগবে। তাতে হোক না ৫০০ টাকা স্বপ্ন ছোট থেকে মানবতার কাজ করে যাওয়া।

নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি সাবিনার পরামর্শ,স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। আমার প্রতিটি নারীর জন্য একটাই কথা থাকবে, আমরা নারী হয়েছি বলে কি হয়েছে! আমরাও মানুষ। যাদের লক্ষ্য অটুট থাকে এবং যদি পরিশ্রম করতে পারে, আমার মনে হয় নারী বা পুরুষ নয়, প্রতিটি মানুষই সফল হবে। এছাড়া আমরা আগে ওই রকম কোনো সুযোগ পায়নি, কিন্তু বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারী রাও এক সাথে এগিয়ে যাবে, ভাবতে হবে নারী নয় পুরুষ নয় মানুষ হিসাবে বাঁচতে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর