শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন

দৌলতপুরে দুজনকে কুপিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৮৮ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩, ৯:২৩ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গরুর পাটক্ষেত খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রকাশ্যে দুই কৃষককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী উজ্জ্বল সর্দার ও তার লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ নিহতদের পরিবারের। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় উজ্জ্বল চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, টেন্ডারবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।

দুই কৃষককে হত্যার ঘটনায় দৌলতপুর থানায় উজ্জ্বল সর্দারকে প্রধান আসামি করে ৩২ জনের নামসহ ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন প্রধান অভিযুক্ত উজ্জ্বল সর্দার। তবে তার বাড়ি থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, ছয়টি রামদাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত বুধবার (১৪ জুন) বিকালের দিকে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাটখোলাপাড়া গ্রামের মালিথা পাড়া এলাকায় উজ্জ্বল সর্দার ও তার লোকজন প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে বজলু মালিথা (৪২) ও শরিফুল মালিথা ওরফে ভেলশ মালিথাকে (৪৩) হত্যা করে। এঘটনায় মালিথা বংশের প্রায় ১৫ জন আহত হন।

এ বিষয়ে নিহত শরিফুলের স্ত্রী চায়না খাতুন ও তার ছেলে গোলাম বলেন, বুধবার বিকালে উজ্জ্বল সর্দারের নেতৃত্বে তার বাহিনীর অসংখ্য অস্ত্রধারী লোকজন নিহতদের বাড়িতে হামলা করে। এসময় উজ্জ্বল ও তার লোকজন রামদা দিয়ে বজলু ও শরিফুলকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে। এসময় উজ্জ্বল, জালাল ও মান্নান সর্দারের হাতে পিস্তল ও রামদা ছিল। তাদের লোকজন অস্ত্রসস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে নির্মমভাবে দুইজনকে হত্যা করেছে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। উজ্জ্বল সর্দারদের লোকজনের নৃশংস হামলায় অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই।

প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা বলেন, হাটখোলাপাড়া গ্রামের মৃত আলিম সর্দারের ছেলে উজ্জ্বল সর্দার (৪৭) বিগত বিএনপি সরকারের সময় ওই দলের একজন চিহ্নিত ক্যাডার ও স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠি লালচাঁদ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর লালচাঁদ বাহিনী দৌলতপুরের চরাঞ্চলের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। পরে এই বাহিনীর প্রতিপক্ষ হিসেবে ছাপাত-পান্না বাহিনী গড়ে ওঠে। সেসময় ছাপাত-পান্না বাহিনীর ভয়ে উজ্জ্বল দেশের বাইরে চলে যান। বছর পাঁচেক আগে এলাকায় ফিরে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ সরওয়ার জাহান বাদশাহর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এরই সুবাদে উজ্জ্বল এলাকার অবৈধ বালুঘাট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় নতুন করে সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।

তারা আরও বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে উজ্জ্বল সর্দার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের হঠাৎ উজ্জ্বলকে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী বাদশার পক্ষে নির্বাচনী প্রচরাণায় অংশ নিতে দেখা যায়। উজ্জ্বল অনেকদিন ধরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এছাড়া উজ্জ্বল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারী কাজ করে। এমপির সঙ্গে সখ্যতার কারণেই উজ্জল নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

নিহত বজলুর স্ত্রী নাজমা ও তার মাসুদ মালিথা বলেন, উজ্জ্বল সর্দারের ভাগ্নে ফরিদ আলীর খেতের পাট খেয়ে ফেলে স্থানীয় শ্যামল আলীর গরু। এ নিয়ে ফরিদ ও শ্যামলের মধ্যে বিরোধ হয়। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফরিদকে মারধোর করে শ্যামল। এদিকে শ্যামলের সঙ্গে বন্ধুত্ব একই এলাকার মালিথা বংশের তুষারের। পরে উজ্জল সর্দারের ক্যাডার তুফান আলী এলাকায় রটিয়ে দেয় যে ফরিদকে মারধোরে তুষার ইন্ধন জুগিয়েছে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। এলাকার সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা উজ্জ্বল মানতে পারেননি যে তার ভাগ্নের গায়ে কেউ হাত তুলতে পারে। এই দ্বম্ভ থেকেই সামান্য ঘটনাকে পুজি করে এলাকার মালিথা বংশের লোকদের ওপরে নৃশংস হামলা চালায় উজ্জ্বল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন।

কুষ্টিয়া-১ আসনের (দৌলতপুর) সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, জমির ফসল খাওয়াকে কেন্দ্র করে সর্দার গ্রুপের হামলায় বজলু মালিথা এবং শরিফুল মালিথা নিহত হয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক বিষয়। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে এঘটনা ঘটেছে। তাদের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে আমার মনোয়ন নিশ্চিত জেনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা পরিকল্পিতভাবে কয়েকদিন ধরে এলাকায় উত্তপ্ত ছড়াচ্ছে, আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে, ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের ন্যক্কারজনক আচরনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে সরাসরি উজ্জ্বল সর্দার উপস্থিত ছিল না। তবে তার লোকজন ও তার বংশের লোকজন ছিল। উজ্জ্বল সর্দার দলের একজন কর্মী। একজন কর্মীর সাথে নেতার যেমন সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক-সুন্দর, তার সাথেও আমার তেমন সম্পর্ক। এর বেশিকিছু না। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা প্রকৃত দোষী আইননুসারে তাদের শাস্তি হবে, তদন্তে ঘটনার রহস্য উন্মোচন হবে, অপরাধীদের শাস্তি হবে ইনশাআল্লাহ। ইতোমধ্যে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে ন্যায় বিচারের স্বার্থে সকলের কাজ করা উচিৎ৷

এবিষয়ে উজ্জ্বল সর্দারের স্ত্রী মাসেদা খাতুনের বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে আমার স্বামী জড়িত না। সে সময় তিনি এলাকায় ছিলেন না। বাদশা এমপির সঙ্গে আমার স্বামীর ভালো সম্পর্ক। আমার স্বামী নির্দোষ।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান বলেন, গরুতে পাট ক্ষেত খাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার ৬ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর