গেল কয়েক দিন ধরে স্বর্গ, মর্ত্য কিংবা পাতালপুরের সকল স্থানে যে ধ্বনি শ্রবণ যন্ত্রটিকে সবচেয়ে বেশিবার আলিঙ্গন করছে সেটি ‘বাজেট’ ভিন্ন আর অন্য কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে চলছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। তাই কর্ণের মতো নাসারন্ধ্রও ঘ্রানের সাথে আলিঙ্গনে ব্যস্ত সমানতালে । আম কাঁঠালের ঘ্রাণ আস্বাদনে নিয়মিত ডিউটিতে না কুলিয়ে বেচারাকে করতে হচ্ছে ওভার টাইম। অবশ্য তাতে হাপিত্যেশ হবার তেমন কোন কারণ নেই। কথায় আছে ফলে বারে বল। আর পেটে খেলে পিঠে শয়।
এখন কথা হচ্ছে, মানব দেহ ও পৃথিবীর এত যন্ত্র থাকতে আমি কেন শ্রবণ ও ঘ্রাণ আস্বাদনে দায়িত্বরত যন্ত্র দুটির পেছনে লাগলাম? না। বিধাতার সৃষ্ট যন্ত্র দুটি নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। তবে এই যন্ত্রের raw- materials বা কাঁচামাল নিয়ে দু-চার লাইন বলার অধিকার আছে বৈকি।
অনেক বছর আগে হাইস্কুলে পড়ার সময় বাংলা ব্যাকরণের ক্লাসে লিঙ্গান্তর শেখানোর এক ফাঁকে শিক্ষক রম্যভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলেন -বলতো কাঁঠাল আর আইনের লিঙ্গান্তর কি? স্কুল পড়ুয়া কৈশোরের সেই আমি ক্লাস ভর্তি সহপাঠীর মধ্যে শিক্ষক মহোদয়কে কি উত্তর দিয়েছিলাম সেই কথায় পরে আসি।
তার আগে কাঁঠাল আর আইনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট জেনে নেয়া যাক।
জাতীয় ফল কাঁঠাল মোরাসিয়াপরিবারের অর্টো- কার্পাস গোত্রের একটি গ্রীষ্মকালীন ফল যা কাঁচা বা পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। সুমিষ্ট এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি,এ, আয়রন, থায়ামিন, রাইবোফ্লোবিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম।
অসংখ্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কাঁঠাল রাতকানা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, বার্ধক্য প্রতিরোধ, ক্ষতিকর ফ্রি- র ্যাডিকেলস ও সর্দি -কাশি জনিত রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ, দুশ্চিন্তা, ভয় ও বদ হজমজনিত সমস্যা রোধ, হাঁপানি, চর্মরোগ ,জ্বর ,ডায়রিয়া ,হৃদরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত সংকোচন ও রক্তস্বল্পতা দূরীকরণের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
তবে চাঁদের কলঙ্কের মত এত এত গুণ থাকা স্বত্ত্বেও ব্যক্তি ও গ্রহণের পরিমাণ ভেদে কিছু সমস্যা সৃষ্টির দায় এড়ানো থেকে কাঁঠালের অপারগতা অনস্বীকার্য।এ তো গেল কাঁঠালের পুষ্টিগুণ। এবার সম্মুখ সমরে কাঁঠালের বিরত্বগাথা শোনা যাক।
একবার কোনো এক মধুমাসে আফগানিস্তান থেকে এক পাঠান এসেছিলেন বাংলাদেশে বেড়াতে। কাঁঠালের সুঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে কোন প্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া তৎক্ষণাৎ হাত নেড়ে খেতে শুরু করেন দেন ভদ্রলোক। কিছুক্ষণ বাদে যখন টের পেলেন তখন দাঁড়ি ও গোঁফ কাঁঠাল আঁঠাই আষ্টেপৃষ্ঠে একাকার। কিছুতেই ছাড়ে না। দাঁড়ি গোঁফের সাথে কাঁঠাল আঠার এই যুদ্ধে ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি কায়াধারী পাঠান সাহেব পুরোদস্তু নাস্তা নাবুদ হয়েছিলেন সেদিন।
দেশে ফিরে বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় তিনি লিখেছিলেন-“ইয়ার বাঙ্গাল মে এক আজব ফ্রুট খায়া। জো বাহার মে খাছরা খাছরা, আন্দার মে লাবরা লাবরা। আন্দার মে এক ডাণ্ডাভী হায়। জো খোদা কা নূর খারাপ কর দিয়া।”সাধে কি তিনি বলেছিলেন,”বাঙ্গাল মে আয়া কাঁঠাল খায়া তো গজব খায়া”।
এবার আসা যাক আইনের কাছে। গত বৃহস্পতিবার পেশ হলো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। বাজেটে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দাঁড়িপাল্লার দিকে না যায়। আমি বরং আইন নিয়ে দু চারটা কথা বলি। বাজেটে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ -সম্পদ বৈধ করা যাবে। যদি কিনা ঐ সম্পদের উপর ১৫ শতাংশ আয়কর দেয়া হয়। যেখানে বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বা সম্পদের উপর এর মাত্রা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। বিষয়টি কতটা ন্যায়-বিবেক ও সুশাসন বর্জিত সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা থেকে যায়।
আরো ভয়ানক ব্যাপার উক্ত শর্ত পূরণ করলে সেই ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রশমিত ও নির্মূলকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না ,দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ঐ সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ।
এ থেকে কি সহজেই অনুমেয় নয় যে, দেশের প্রচলিত প্রায় সব আইনেই কমবেশি ফাঁকফোকর রয়েছে। বুদ্ধদেব গুহের একটি লেখনি থেকেও এর যথার্থতা পাওয়া যায়। কথা সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ একজন রিনাউন্ড চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এবং আইনবিদ ছিলেন। তিনি তার ‘ছৌ’ উপন্যাসের এক জায়গায় লিখে গেছেন, প্রতিটি আইন তৈরি হয় একটা ফাঁক রেখে। যে ফাঁক দিয়ে তাদের মক্কেলদের বের করে আনতে বড় বড় ‘ল’ ফার্ম গুলো ঘর আলোকিত করে বসে আছে।
এখন ফেরা যাক হাই স্কুল জীবনে ব্যাকরণ ক্লাসের রম্য শিক্ষকের লিঙ্গান্তর নিয়ে করা গুগলি প্রশ্নের সমাধানে।
প্রশ্ন:-কাঁঠাল ও আইনের লিঙ্গান্তর কি?
আশা করি এতক্ষণের তরযমায় পাঠক গণের সেটি বুঝতে আর বাকি নেই।