কুষ্টিয়ার মিরপুরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে ব্যবসায়ী শওকত আলীকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, আইনজীবী সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) দুপুরের দিকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক আবীর পারভেজ অভিযোগ পড়ে শোনান। এসময় আদালতে উপস্থিত আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং ন্যায় বিচার দাবি করেন। এর আগে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক। মামলার বিচার শুরুর জন্য আগামী ৯ জুলাই স্বাক্ষীর দিন ধার্য করেন আদালত। আসামিরা জামিনে মুক্ত আছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৯ জুলাই রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শওকত আলীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে আসামিরা। এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা আইনজীবী মো. আব্দুল্লাহিল মারুফ বাদী হয়ে ১১ জুলাই মিরপুর থানায় ১০ জন আসামির নামোল্লেখ সহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। থানা পুলিশ অসহযোগিতার কারণে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি তদন্তভার গ্রহণ করে। মামলার তদন্ত শেষে ১৬ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। একই সাথে প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রবিউল আওয়ালের বিরুদ্ধে ২ নম্বর আসামি ওয়াকিবুল ইসলাম লিপসনের মোবাইল ফোন গায়েবের অভিযোগের সত্যতা পায়। এ ঘটনায় এস আই রবিউল আওয়ালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছে। এছাড়াও হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি পুলিশ সদস্য হাবিবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছে।
আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, আলোচিত শওকত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে মামলার ২ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি ওয়াকিবুল ইসলাম লিপসনের মোবাইল ফোন পড়ে যায়। সেই ফোন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বাদীপক্ষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল আওয়ালকে দেয়। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত মোবাইল ফোন নিজ হেফাজতে নিয়ে জব্দ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত না করে, এসআই উক্ত মোবাইল ফোন মিরপুর থানার ডেক্স থেকে চুরি হয়েছে মর্মে মিথ্যা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে মামলার অন্যতম আলামত ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনটি সুকৌশলে সরিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে মামলার ভুক্তভোগী অ্যাডভোকেট মারুক বিষয়টি কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে অবগত করলে রবিউল আওয়ালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয় এবং একই সঙ্গে বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে আদালত কুষ্টিয়ার সিআইডি পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লাবনী সুলতানা পলি তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। এসআই রবিউল আওয়ালের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ২০১ ধারায় আপরাধ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। এই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভিকটিম আইনজীবী মো. আব্দুল্লাহিল মারুফের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথম থেকেই বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। বিজ্ঞ আদালতে প্রবেশের সময় গত আমাকে ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। আসামীরা বিজ্ঞ আদালত হইতে তাৎক্ষনিক জামিন পেয়ে এলাকায় মহড়া সহ ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে আপোষের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। একটি হত্যা মামলায় তাৎক্ষণিক জামিন পাওয়ায় এবং বিচার বিভাগ নিয়ে আসামীরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কথাবার্তা বলায় এলাকাবাসী সহ স্বাক্ষীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। এই মামলাটিতে আসামীদের প্রতি বিজ্ঞ আদালত যে সহানুভূতি দেখিয়েছেন, সেটাও নজির বিহীন। এই মামলার ৬ জন আসামী মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে ২ সপ্তাহ ও ৪ সপ্তাহের স্যারেন্ডারের ডাইরেকশন নিয়ে সেটাকে আগাম জামিন উল্লেখ করে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী দাড় করিয়ে বিজ্ঞ আদালতের উপর প্রভাব বিস্তার করে জামিন পান বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আছে। এই বিষয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বাদী পক্ষ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
তিনি আরও জানান, আমরা আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করে চলেছি এবং সর্বশেষ আমরা বিজ্ঞ আদালত হইতে আসামীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির মাধ্যমে দ্রুত ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকার পক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বলেন, ব্যবসায়ী শওকত আলীকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, আইনজীবী সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। মামলার বিচার শুরুর জন্য আগামী ৯ জুলাই স্বাক্ষীর দিন ধার্য করেন আদালত।