শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

বয়সের কাছে হার না মানা এক নারী অগ্রদূতের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১২২ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২, ৭:৪০ পূর্বাহ্ন

বয়স কে হার মানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক উজ্জ্বল নাম সাবিনা শারমিন। সাবিনা শারমিনের জন্ম কুষ্টিয়া জেলার হরিপুর ইউনিয়নে। তার পিতা ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার একজন পরিবহন উদ্যোক্তা। বাবার পথ ধরে অনুপ্রেরণা পেয়ে সাবিনা শারমিন ও তার ভাইয়েরা সবাই নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলেন।

সাবিনা শারমিনের যে সময় জন্ম সেই সময়ে মেয়েদের সংসারের বাইরে কাজ করে উদ্যোক্তা হওয়া বা প্রতিষ্ঠিত হওয়া এতটা সহজ ছিল না। সঙ্গত কারণেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হওয়ার পরে মেয়েদেরকে সংসারী হয়ে যেতে হয়। সাবিনা শারমিন ও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।

সাবিনা শারমিনের বিবাহ হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম দুলাল সাহেবের সাথে। সাবিনা শারমিনের শ্বশুর নিবাস ছিল খোকসা উপজেলার সমষপুর গ্রামে। বৈবাহিক অবস্থায় শারমিন দুইজন কন্যা সন্তানের জননী হন। স্বামী সন্তান সংসার সবকিছু ঠিক রেখে একজন মেয়ের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প কখনোই সহজ হয় না। এক্ষেত্রে সাবিনা শারমিন ছিলেন ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক। তিনি প্রচন্ড ধৈর্য ধারণ করেন। ‌ এবং সন্তানদেরকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলেন। একটা পর্যায়ে এসে তার মনে হয় আমার হাতে এখন অনেক সময় রয়েছে। তার ভেতরের সুপ্ত বাসনাকে জাগ্রত করে তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রয়াস শুরু করেন। তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম দুলাল তাকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেন।

সাবিনা শারমিনের কুষ্টিয়ার ঠিকানা কোর্টপাড়ার তার নিজ বাসভবনে একটি ঘরে তিনি বুটিক হাউজ গড়ে তোলেন। উন্নত মানের বেডশীট, থ্রি পিস, বাটিক সহ বিদেশী আমদানিকৃত কাপড় নিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। প্রথম প্রথম খুব একটা সাড়া না পেলেও ধীরে ধীরে সাবিনা বুটিক হাউজের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

সাবিনা শারমিন ব্যবসার পাশাপাশি ইচ্ছা পোষণ করলেন নারীদেরকে আরও বেশি এগিয়ে নিতে হবে ‌‌তিনি যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন সেই সমস্যা যেন অন্য কোন নারীর না পোহাতে হয় সেজন্য তিনি তার নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে নারীদেরকে বুটিক্সের উপরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করলেন। ধীরে ধীরে সাবিনা শারমিনের কাছে ট্রেনিং নেয়া নারীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। বুটিকের ওপরে ছাড়াও হাতের কাজের বিভিন্ন পণ্য তৈরির ওপরেও তিনি প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করলেন।

সেই সকল পণ্য আবার তিনি বিক্রীবৃদ্ধির সূচনা করলেন। সাবিনা বুটিক হাউজে সকল প্রকার মেয়েদের জামা কাপড় ছাড়াও যুক্ত হলো হাতের তৈরি নানা রকমের পণ্য। যুক্ত হলো ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট সহ আরও অনেক পণ্য। এতে সাবিনা বুটিক হাউস সমৃদ্ধি লাভ করল। সাবিনা বুটিক হাউস সফল হওয়ার পরে তিনি শুরু করলেন সাবিনা ফুড কর্নার এর কার্যক্রম। ‌ হাতের তৈরি রান্না করে খাবার বিক্রির এই কার্যক্রম প্রথম থেকেই দারুন সাড়া ফেলে।

এখন সাবিনা শারমিন কুষ্টিয়া জেলার মেয়েদের এক অনুপ্রেরণার নাম। অনেক মেয়েদের প্রশিক্ষক ও মেন্টর তিনি। তিনি একাধারে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং তাদের বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন। তিনি সবাইকে অনুপ্রেরণা দেন আমি অনেক বয়স পেরিয়ে আমার ভেতরে উদ্যোক্তা সত্তা নষ্ট করিনি তাই তোমরাও কখনো হতাশ হয়ো না লেগে থাকো এক সময় সকলের দ্বারাই সফল হওয়া সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর