করোনাভাকের মতোই নিরাপদ তুরস্কের করোনা ভ্যাকসিন তুরকোভাক। মানবদেহে সফল প্রয়োগের পর জানা গেছে- তুরকোভাক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাবে প্রায় ৫০ শতাংশ। শতভাগ কার্যকর এই ভ্যাকসিনের ল্যাব টিমের ৯ জনের মধ্যে একজন কুষ্টিয়ার খোকসার তারকিস পাভেল।
সম্প্রতি তুরকোভাক নিয়ে একটি গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করে তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় হ্যাসেটেপ ইউনিভার্সিটি। তাদের সমীক্ষা বলছে, চীনা করোনাভাকের তুলনায় তুর্কির ঘরোয়া ভ্যাকসিন তুরকোভাক কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় ৪৯ দশমিক দুই নয়। খবর অ্যানাডুলো এজেন্সির।
পরিসংখ্যান বলছে, করোনাভাক গ্রুপে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল ৮ দশমিক নয় ছয় শতাংশ। যা তুরকোভাকে ৪ দশমিক পাঁচ পাঁচ। তাতে বলাই যায়- এটি চীনা ভ্যাকসিনের মতোই নিরাপদ।
গত বুধবার (১২ জানুয়ারি) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনভাইরাস সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য অধ্যাপক সেরহাত উনাল এবং তুরকোভাকের জন্য ফেজ-৩ ট্রায়ালের প্রধান গবেষক প্রফেসর মাইন দুরুসু তানরিওভার তুরকোভাকের মধ্যবর্তী ফলাফল ঘোষণা করে রাজধানী আঙ্কারায় একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।
মধ্যবর্তী ফলাফলের জন্য ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত সংগ্রহ করা নমুনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১৮ এবং ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে এক হাজার ১৮২ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন করা হয়েছিল। যারা এ যাবৎকালে করোনায় সংক্রমিত হয়নি।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন স্বেচ্ছাসেবক করোনাভাক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেছেন। তবে হালকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল ইনজেকশনস্থলের চারপাশে ব্যথা।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে তুরস্ক নিজেদের ব্যবস্থাপনায় করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার জন্য গবেষণা করছিল। তারপর থেকেই তারা কাজ করে এতে কাজ শুরু করেন কুষ্টিয়ার খোকসার তারকিস পাভেলসহ ৯ জন। পাভেল এরসিয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে লেকচারার হিসেবে কাজ করছেন। আর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন রিসার্চ ল্যাব স্কেল প্রোডাকশন অ্যান্ড অ্যানিমেল স্টাডিতে গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত প্রি-ক্লিনিক্যালি স্ডাডির লেখক হিসেবে কাজ করছেন।
কুষ্টিয়ার খোকসার থানাপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম নীলার একমাত্র পুত্র পাভেল এসএসসি পাশ করেন খোকসা-জানিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এর পর উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে। পরে ইয়োডা ইউনিভারসিটি থেকে শেষ করেন স্নাতক। আর স্নাতকোত্তর করেন সুইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রেগুলার শিক্ষাজীবন শেষে গবেষণার জন্য তুরস্কের এরসিয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেন।
তারকিস পাভেল কুষ্টিয়ার সময়কে বলেন, এটি আমার জীবনের সফলতার অন্যতম একটি মাইলফলক। আমার গবেষণার স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি। এমন অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। সবার কাছে আমি দোয়াপ্রার্থী।
পাভেল বলেন, আমি বাংলাদেশের জন্যও কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি। সুযোগ পেলে আমার সক্ষমতা দিয়ে দেশের জন্য বড় কিছু করতে চাই। যাতে বাংলাদেশের নাম বিশ্বের কাছে মেলে ধরতে পারি।
প্রসঙ্গত এর আগে আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়ার মত দেশের প্রাণঘাতী ক্রিমিয়ান কঙ্গো ভাইরাসের ভ্যাকসিন পেটেন্ট পেয়েছিলেন কুষ্টিয়ার খোকসার পাভেল ও তার টিম।
এই ভাইরাস সাধারণত আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ভারতে দেখা যায়। আর সেক্ষেত্রে চিন্তা করতে গেলে বাংলাদেশও কিন্তু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ভাইরাসটিতে মৃত্যুর হার শতকরা ৩০ শতাংশ। তাই আগেভাগেই এ ভাইরাসটি প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক হতে হবে।
জানা গেছে, এই ভাইরাসটি প্রতিরোধে কাজ করবে ভ্যাকসিনটি। ইতোমধ্যেই প্রি-ক্লিনিক্যালি ট্রায়ালে শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে। আর মানবদেহে প্রয়োগের জন্য অপেক্ষায় আছে ভ্যাকসিনটি।
মানবদেহে এটির সফলতা পেলে বিশ্ব দরবারে ইতিহাস গড়বে কুষ্টিয়ার খোকসার কৃতীমুখ তারকিস পাভেল।