রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

গোড়ায় গলদ, মৃতই থেকে গেল গড়াই খাল

কুষ্টিয়ার সময় ডেস্ক / ১১৮ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২, ১২:২৩ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়া পৌর এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গড়াই খাল, যা এখন মরা গড়াই নামে পরিচিত। দখল, দূষণ আর সংস্কারের অভাবে দীর্ঘ সাড়ে ৮ কিলোমিটার খালটি অচল হয়ে আছে। এক সময় বিভিন্ন নৌযান চললেও এখন তা বোঝার উপায় নেই।

সমকালের খবরে বলা হয়- খালটিকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে কয়েক বছর আগে একটি প্রকল্প হাতে নেয় কুষ্টিয়া পৌরসভা। পরিকল্পনায় খাল খননের পাশাপাশি দু’পাশে হাঁটার ব্যবস্থা রাখা, বৃক্ষরোপণ এবং খালের পানিতে মাছ ও হাঁস চাষের পরিকল্পনা ছিল। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ঠিকাদারের গাফিলতিসহ নানা কারণে ৬ কোটিরও বেশি টাকার প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে। খালের কিছু জায়গায় নামকাওয়াস্তে খনন করে এরই মধ্যে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

সরেজমিনে খাল পরিদর্শনে দেখা যায়, খালটি পৌর এলাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে কলাবাড়িয়ায় গিয়ে ঠেকেছে। ২০১৮ সালে খননের কাজ হলেও এখন দেখে বোঝার উপায় নেই একসময় এটি সংস্কার হয়েছিল। ঝোপঝাড় আর লতাপাতা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। পানির কোনো অস্তিত্ব সহজে চোখে পড়ে না। যে পানি আছে, তাও বিষাক্ত। মাছ দূরে থাক, কোনো প্রাণীও এখানে বাস করতে পারে না। নাগরিকরা প্রতিনিয়ত খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ছোট ছোট কলকারখানার বর্জ্যও এসে পড়ছে।

মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার মিজানুর রহমান জানান, কয়েক বছর আগে উচ্ছেদ অভিযান চলে। এরপর খোঁড়া শুরু হলেও তা এলোমেলোভাবে হয়। ফলে খাল আগের চেহারায় ফিরে গেছে। এখন মানুষের কোনো কাজে আসছে না।

পশ্চিম মজমপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও খালে সারা বছর পানি থাকত। বর্ষায় ভরে যেত। মাছ পাওয়া যেত। ছোট নৌযানও চলত। এখন খালপাড়ে যাওয়া যায় না। বিষাক্ত গন্ধ। পানি নেই।

সংশ্নিষ্ট দপ্তর ও কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও ১ নম্বর ওয়ার্ড মূলত গড়াই খাল ঘিরে গড়ে উঠেছে। এসব এলাকার পানি খালে গিয়ে পড়ে। শহরের বর্ধিত এলাকায় নতুন করে ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। এসব ড্রেনের মাথা খালে এসে মিশেছে। পানি প্রবাহিত হচ্ছে খালে। তবে খাল ভরাট থাকায় পানিও ঠিকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর জানান, ৬ কোটি টাকারও বেশি বাজেটের এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে আরও যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন ছিল। যে বড় পরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, খালটি খনন কাজ পায় নেশন টেক নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি। তবে এই কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না প্রতিষ্ঠানটির। ২০১৭ সালে খাল খননের টেন্ডার হলেও ঠিকাদার কাজ শুরু করেন পরের বছর জানুয়ারিতে। তা চলে কয়েক মাস। মেশিন দিয়ে কোনোরকমে মাটি সরানো হয়। ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বিল দাখিল করা হলেও অর্ধকোটি টাকারও কাজ হয়নি বলে মনে করেন নাগরিকরা।

ঠিকাদার দেড় কোটি টাকার মতো বিল উত্তোলন করেছেন। বাকি বিল প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঢাকার পরিদর্শক দল কাজ পরিদর্শনের পর বাকি টাকা পাবেন ঠিকাদার।

পৌর প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মূলত খাল খননে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি ঠিক ছিল না। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি আর সামনে এগোয়নি।

খাল খননের ব্যাপারে ঠিকাদার ইফতেখার শিমুলের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, পরিকল্পনায় কিছুটা ভুল থাকায় এটি খনন হলেও বাকি যে কাজ ছিল, সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এজন্য ঠিকাদারকে এখনও চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর