শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন

খোকসায় ঠিকাদারের খামখেয়ালিতে গৃহহীন অর্ধশত পরিবার!

কুষ্টিয়ার সময় ডেস্ক / ৩৮৪ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:১০ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার খোকসার গড়াই নদের তীরে এত দিন থাকত প্রায় অর্ধশত পরিবার। শহর রক্ষার বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে গড়াই নদের তীরের সেই পরিবারগুলোর বসতঘর সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। ইতিমধ্যে কয়েকটি পরিবারকে উচ্ছেদও করা হয়েছে। এদিকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে ওই সব পরিবার।

জানা গেছে, পৌর এলাকার ৫,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর ঋষিপাড়া, মিয়াপাড়া, শাহপাড়া ও তাঁতিপাড়া গড়াই নদের তীরে অবস্থিত। তীরে অসংখ্য পরিবার যুগ যুগ ধরে পৈতৃক ভিটায় বসবাস করত। অব্যাহত ভাঙনে গ্রামগুলো ছোট হয়ে গেছে।

ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ইতিমধ্যে গড়াই নদের পূর্ব পাড়ে খোকসা বাজার থেকে জাগলবা গ্রাম পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজ ওয়ার ট্রেড সিস্টেম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নকশায় নদের তীরের বসতি উচ্ছেদ না করে বালু ভরাট করে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলে তাঁদের থেকে আবেদন নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার অধিক লাভের আশায় পরিকল্পনা না মেনে তীরের বসতভিটা উচ্ছেদ করে বাঁধ নির্মাণ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদের তীর থেকে প্রায় ৫০ ফুট পাড় কেটে বাঁধ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়।

উচ্ছেদে ভিটেছাড়া হয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লির লাল্টু দাসের স্ত্রী ঝনু দাস। নিজের কেনা জমি ও বসতঘর হারিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর দাওয়ায় (বারান্দায়)। পলিথিন দিয়ে ঘিরে সেখানে রাত কাটাচ্ছেন।

একমাত্র ঘরের টিনের চালাগুলোও রাখার জায়গা নেই। তাই সেগুলো এলোমেলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। লাল্টু দাস পলিথিন কুড়িয়ে বিক্রি করে জীবন চালান। এ পল্লির বাবুল দাস, পরিতোষ বিশ্বাস, পরিমল দাসসহ ৭টি পরিবারের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয় বসতঘরের আংশিক ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

ঝনু দাস জানান, কয়েক দিন ধরে এলাকার নেতারা ঘর সরাতে বলছিলেন। অন্যত্র যাওয়ার জমি না থাকায় তাঁরা বসবাস করছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁর বসতঘরের এক পাশে মাটি কাটার মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁদের বসতঘরটি হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁর কোনো কথায় কান দেননি।

শাহজাহান ওরফে কালা শাহজাহান জানান, বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি ভেঙে কোথায় যাবেন। জমি কিনে বাড়ি বানানোর সমর্থ তাঁর নেই। কর্তৃপক্ষ তাঁদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেননি।

এ বিষয়ে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিম হুসাইন বলেন, যেভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিরা পৌর এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের বিষয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী রাজু দাবি করেন, যেভাবে প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে, সেভাবে তাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। তাঁরা কাউকে উচ্ছেদ করেননি।

পাউবোর কুষ্টিয়ার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সালাউদ্দিন আহম্মেদ জানান, প্রকল্প এলাকার কাউকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে যদিও পুনর্বাসনের বরাদ্দ নেই, তবু ঝনু দাসকে পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেব।’

সূত্র: আজকের পত্রিকা


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর