খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মরদেহ পুনরায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বুধবার কবর থেকে মরদেহ তুলে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে সেলিমের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এসময় লাশের সাথে খুলনা খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবির কুমার বিশ্বাস সহ ৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। মরদেহ পৌঁছানোর পর কুমারখালী থানা পুলিশ ও খুলনার খানজাহান আলী পুলিশের উপস্থিতিতে ড. সেলিম হোসেনকে পুনরায় দাফন করা হয়।
ড. সেলিমের লাশের গাড়ি তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তার বাবা শুকুর আলী ও দুই বোন শিউলি শ্যামলী কান্নায় ভেঙে পড়েন। এবং আহাজারি করে বলেন মরার পরও কতো কষ্ট পাচ্ছে ছেলেটা মরদেহ নিয়ে কতো টানাহ্যাঁচরা চলছে। তারপরও যারা সেলিমের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের উল্লেখযোগ্য বিচার দাবী করেন তারা। এসময় খুলনা খানজাহান আলী থানার ওসি প্রদীপ কুমার বিশ্বাস ও কুমারখালী থানার পুলিশ ড. সেলিমের মরদেহ তার বাবা শুকুর আলী ও দুই চাচাতো ভাই শামিম এবং সোহেলের নিকট সনাক্ত পূর্বক বুঝে দেন। শীত উপেক্ষা করে এসময় এলাকার অসংখ্য মানুষ কবরস্থানে ভীড় জমান। পুলিশের উপস্থিতিতে পূনরায় লাশ দাফন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত , দাফনের ১৪ দিন পর বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে ড. সেলিমের মরদেহ উত্তোলনের সময় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাত, খুলনা খান জাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস ও কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
মরদেহ উত্তোলনের সময় পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক মানুষ সেখানে ভিড় জমান। মরদেহ উত্তোলনের পরপরই ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ পাহারায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু ড. সেলিম হোসেনের মরদেহ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দেখা যায় বিপত্তি বেলা ১১ টায় মরদেহ লাশ কাটা ঘরে পৌঁছালে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ময়নাতদন্তের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কুষ্টিয়া হাসপাতালের আরএমও ডা. আশরাফুল, ডা. মাহাফুজ, ও ডা.রুমন ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে পোষ্টমর্টেমে অপারগতা প্রকাশ করায় লাশ ঢাকা বা রাজশাহী মেডিক্যালে নেবার প্রস্তাব দেয় তারা। পরবর্তীতে সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম ড. সেলিমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তার মরদেহ ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়।
উল্লেখ্য , গত ৩০ নভেম্বর কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী অধ্যাপক সেলিমের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর ওই শিক্ষক বাসায় ফিরে মারা যান।
অভিযোগ উঠেছে, সেজানসহ ওই শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক সেলিমকে লাঞ্ছিত করেছিলেন, যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। পরদিন ১ ডিসেম্বর অধ্যাপক সেলিমকে তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রামে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় খুলনার খানজাহান আলী থানার পরিদর্শক তদন্ত শাহরিয়ার হাসান অধ্যাপকের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য গত ৫ ডিসেম্বর খুলনার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৬ ডিসেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠি পাঠান।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে কবর থেকে মরদেহ তুলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয়। এবং বুধবার তার মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিচুর রহমান সই করা বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাতে মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে।