রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০১ অপরাহ্ন

খোকসায় অর্ধশত পরিবারকে বসত বাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১০৪৪ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার খোকসায় শহড় রক্ষার বাঁধ নির্মান করতে গিয়ে গড়াই নদী তীরের একটি আদিবাসী পল্লীসহ ৪ পাড়ার প্রায় অর্ধশত পরিবারকে বসত বাড়ি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে বসত ভিটা হারিয়ে নদী তীরের এসব পরিবার গুলো ভুমিহীন হতে বসেছে।

উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ৫,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর ঋষি পাড়া, মিয়া পাড়া, শাহ পাড়া ও তাঁতী পাড়ার প্রায় ৮শ পরিবার যুগযুগ ধরে গড়াই নদী তীরে পৈতৃক ভিটায় বসবাস করে আসছে। গড়াই নদীর অব্যহত ভাঙ্গনের ফলে গ্রাম গুলো অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে। উপজেলা সদরের প্রধান বাজারসহ গ্রাম গুলোর ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে গড়াই নদীর পূর্ব পাড়ে খোকসা বাজার থেকে জাগলবা গ্রাম পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার নদীর পাড় রক্ষায় বাঁধ নির্মান প্রকল্প গ্রহন করে।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাজ ওয়ার ট্রেড সিস্টেম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। প্রথম দিকে প্রকল্পটি নদী ভাঙ্গন উপদ্রুত এলাকার মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তা বিষাদে পরিণত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এখন নদী তীরের হতদরিদ্র আদিবাসীসহ প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসত ঘর ভেঙ্গে নিতে তিন দিনের সময় বেধে দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

স্কেভেটর দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে বাড়ির আঙ্গিনা ফলে বাধ্য হয়েছে ঘড় সরিয়ে নিতে 

ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের অভিযোগ নকশায় নদী তীরের বসতীদের উচ্ছেদ না করে বালু ফিলিং করে তার পর বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলে তাদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার অধিক লাভের আশায় পরিকল্পনা না মেনে নদী তীরের বসতিদের বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বাঁধ নির্মান করছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিকার পাননি।

ভুক্তভোগীরা আরো জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যে সীমানা নির্দ্ধারণ করেছে তাতে গ্রাম গুলোর অর্ধশত বসত বাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে নিতে হবে। এবার বসতি এলাকায় প্রকল্পের সীমানা নির্দ্ধারণ করায় এসব পরিবার গুলো বসত ভিটা হারিয়ে ভুমিহীন হতে বসেছে।
শহড় রক্ষা বাঁধ নির্মান এলাকায় সরেজমিন গিয়ে ভুক্ত ভোগীদের সাথে কথা বলা হয়। নদীর বর্তমান র্তীর থেকে প্রায় ৫০ ফুট পাড় কেটে বাঁধ নির্মান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কমলাপুুর আদিবাসী পল্লী থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়।

পানিউন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারে উচ্ছেদ অভিযানে নিজের ভিটা ছাড়া হয়েছেন আদিবাসী পল্লীর লাল্টু দাসের স্ত্রী ঝনু দাস। নিজে কেনা জমি ও বসত ঘর হারিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশীর দাওয়ায় (বারান্দায়)। পলিথিন দিয়ে ঘিরে সেখানে রাত কাটাচ্ছেন। একমাত্র ঘরের টিনের চালা গুলো রাখার যায়গা নেই। তাই সে গুলো এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। ৫ সন্তানের জনক লাল্টু দাস রাস্তার পলিথিন কুড়িয়ে বিক্রি করে জীবন চালান। সে জানে না কোথায় হবে তার আশ্রয়। এই পল্লীর বাবুল দাস, পরিতোষ বিশ্বাস ও পরিমল দাসসহ ৭টি পরিবারের মাথাগোজার শেষ আশ্রয় বসত ঘরের আংশিক ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।

মাথা গোজার শেষ সম্বল হারিয়ে অসহায় ঝনু দাস

ঝনু দাস জানান, কয়েকনি ধরে এলাকার নেতারা ঘর সরাতে বলছিল। অন্যত্র যাওয়ার জমি না থাকায় তারা বসবাস করছিল। মঙ্গলবার সকালে তার বসত ঘরের একপাশে মাটি কাটার ম্যাশিন দিয়ে মাটি সরিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে তাদের বসত ঘরটি হুমরি খেয়ে পরে যায়। সে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল। কিন্তু ব্যাটারা তার কোন কথায় কান দেয়নি। এ পর থেকে সে প্রতিবেশীর দাওয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের নদীর উপকুলে বসবাসকারী শাহজাহান ওরফে কালা শাহজাহান বলেন, বাপ দাদার ভিটে বাড়ি ভেঙ্গে কোথায় যাবেন। তার জমি কিনে বাড়ি তৈরীর সংগতি নেই। তাদের পূনর্বাসনের উদ্যোগও নেই। শাহাজাহানের মত আরও বেশ কয়েকটি পরিসবারকে তাদের বসত ভিটা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। শাহজাহনের মত একই অবস্থা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নীলকান্তর স্ত্রী আরতী রানী, মিনতী কর্মকার, রামা কর্মকার,বীনাপানি চক্রবর্তী, রোকেয়া খাতুন সহ আরও বেশ কিছু পরিবারের।

পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিম হুসাইন বলেন, যেভাবে বাঁধ নির্মান করা হচ্ছে তাতে অনেক লোক ক্ষতি গ্রস্থ হবে। উচ্ছেদ হওয়ার পৌর এলাকার বাসিন্দার। তাদের বিষয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কতিপয় প্রভাবশালীদের লাভের জন্য সাধার মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী রাজু বলেন, যে ভাবে প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে, সে ভাবে তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। তারা কোন লোককে উচ্ছেদ করে নি। কোথাও কাউকে সরাতে হলে গ্রামবাসী সরিয়েছে ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সালাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সব স্থানে ফিলিং করে বাঁধ নির্মান করলে অল্প সময়ের মধ্যে বাঁধ ধস যেতে পারে। এই প্রকল্প এলাকার কোন লোককে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে তার জানা নেই। ঝনু দাসের দুরাবস্থার কথা শোনার পর তিনি বলেন, প্রকল্পে যদিও কোন প্রকার পুনবাসনের বরাদ্দ নেই, তবুও ঝনু দাসকে তিনি পুনবাসনে উদ্যোগ নেবেন।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর