সর্বনিম্ন ভোট পাওয়ায় কুষ্টিয়ার আলোচিত সেই নারী প্রার্থী রাজাকারকন্যা শারমিন আক্তারের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হয়ে (নৌকা) প্রতীকে নির্বাচন করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের এই নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাজাকার কন্যা বলে অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পেড়াদহ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ১৬৬। ভোট দেন ২৮ হাজার ৮৩২ জন।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শারমিন আক্তার নাসরিন পেয়েছেন মাত্র ৪২৭ ভোট। ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানতের টাকা ফেরত পাবেন না।
নৌকার প্রার্থী শারমিন আক্তার নাসরিন পেয়েছেন ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট। পোড়াদহ ইউনিয়নে ৬জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে ইসলামী অন্দোলনের আবু আজম ৬১৭ ভোট পেয়ে চতুর্থ এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত শারমিন আক্তার নাসরিন ৪২৭ ভোট পেয়ে ৫ম হয়েছেন। তাই তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুজ্জামান জন (আনারস) প্রতীকে ১২ হাজার ৫৩৪। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বেনজীর আহমেদ পলাশ মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯ হাজার ৮১০ ভোট।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার দোলন কান্তি চক্রবর্তী জানান, ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থী জামানতের টাকা ফেরত পাবেন না। এজন্য পোড়াদহ ইউনিয়নের নৌকা প্রার্থী শারমিন আক্তারের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শারমিন আক্তার নাসরিন বলেন, আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা আমার বিপক্ষে অবস্থান নেন। এজন্য আমি একাধিকবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন করেও আমি জানিয়েছি যে পৌড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমার বিপক্ষে অবস্থান করছে নৌকাকে হারানোর জন্য। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে নেতাকর্মীরা সুবিধা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
পোড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী শারমিন আক্তার নাসরিন তার নিজ কেন্দ্রে ভোট পাননি। আর ভোটাররা তাকে ভোট না দিলে আমরা কি করতে পারি। আমরা তো তার পক্ষেই কাজ করেছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম জানান, নির্বাচনের আগে পোড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নৌকার প্রার্থী শারমিন আক্তারের পক্ষে কাজ করার জন্য বলা হয়েছিলো কিন্তু তারা শোনেননি। কি কারণে এমন করলেন ইউনিয়ন কমিটি, তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলী জানান, যে সব আওয়ামী লীগ নেতারা নৌকার বিরোধিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর একটা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর এত কম ভোট, এটা লজ্জাজনক।
এর আগে ১১ অক্টোবর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শারমিনের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেন পোড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম। তার লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন শারমিন আক্তার নাসরিনের বাবা আব্দুল গফুর মণ্ডল একজন রাজাকার ও পিস কমিটির সদস্য। এছাড়া ২০১৬ সালের নির্বাচনে শারমিন আক্তার নাসরিন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।