কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ১৭ নম্বর খয়েরচরা মাঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে স্থাপিত হলেও চোখে পড়ার মতো স্থাপনা বলতে ১টি ১তলা বিশিষ্ট ভবন ছাড়া তেমন কোনো ভবন নির্মান হয়নি। তবে বিদ্যালয়টি নিজস্ব ৯৯ শতাংশ জমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত ।
জানা যায়, এই এলাকায় কোনো ঈদগাহ ও জানাযার স্থান না থাকায় প্রায় ৫৫ বছর যাবত এ বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদের নামাজ ও জানাযার নামাজ হয়ে থাকে । এছাড়া বড় এই মাঠে প্রতিদিনই হয়ে থাকে খেলাধুলা । তবে সম্প্রতি সরকারি অর্থায়নে একটি ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠে জায়গা নির্ধারণের পর অন্য একটি জায়গায় নতুন করে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ বর্তমানে যেখানে ভবন নির্মানের পরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে ঈদের নামাজ জানাযার জায়গা এবং খেলার মাঠ হারিয়ে ফেলবে এলাকাবাসী । এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, নতুন ওই ভবনটি ৮৯ ফুট মূল ভবন সাথে ২০ ফুট সৌচাগার পূর্বের প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে গ্রামবাসী মাঠটি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় উক্ত স্থানে ভবন নির্মাণে বাঁধা প্রদান করেন ।
বাঁধা প্রদানের ভিত্তিতে স্কুলের সভাপতি একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং গ্রামবাসীর সামনে স্কুলের পূর্ব পাশের পতিত জমিতে ১১৬ ফিুট নতুন শৌচাগারসহ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে নতুন ভবনটি নির্মাণের জন্য স্থান সংকুলান না হওয়ায় স্কুলের মূল ভবনের পূর্ব পাশে নতুন সৌচাগার ভাঙার সিদ্ধান্ত হয় যার কারণে বিদ্যালয়টির ওই স্থানের মাটি পরিক্ষা সম্পন্ন হয় । সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন নির্মাণ করা সৌচাগার কিছু অংশ ভেঙে বিক্রি করা হয় কিন্তু হঠাৎ এলাকাবাসী জানতে পারে ওই স্থানে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের জায়গা সংকুলান হচ্ছেনা এখানে এলাকাবাসীর প্রশ্ন যদি স্থান সংকুলান না হয় তাহলে কেন নতুন সৌচাগারটি ভাঙা হলো?
উক্ত স্মারকলিপি থেকে আরও জানা যায়, এখন কর্তৃপক্ষ চাই নতুন ভবন ও সৌচাগারসহ ১২২ ফুট অভ্যন্তরে পূর্বপাশে নির্মাণ করবে যা আগের তুলনায় বড় আমাদের আশেপাশের গ্রাম গুলোর মধ্যে একটি মাত্র খেলার মাঠ এ মাঠটিতে নতুন ভবন নির্মাণ করলে মাঠটি সম্পূর্ণরূপে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়বে যা এলাকার যুবসমাজকে মাদকের দিকে ধাবিত করবে । এছাড়া এই মাঠটি এলাকার ঈদগাহ হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বলে ওই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় । মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সরেজমিনে গেলে প্রায় অর্ধশত গ্রামবাসী মুসুল্লি ও যুব সমাজের লোকজন মানববন্ধন করে মাঠটি রক্ষার দাবি জানান ।
ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র জীবন জানান, আমরা স্কুলও চাই আবার খেলার মাঠও চাই। নতুন বিল্ডিং এমনভাবে করা হোক যেন খেলার মাঠ ঠিক থাকে। ঢাকা কলেজের ছাত্র মোস্তাকিম শারিয়ার জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠে খেলাধুলা করে আসছি । আমাদের বাবা দাদারা এই মাঠ খেলাধুলায় ব্যবহার করেছে কিন্তু এখন যদি রাস্তার পাশ দিয়ে ভবন নির্মাণ হয় তাহলে এই ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ টি একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে । আমাদের দাবি যেহেতু স্কুলের জমি আছে অন্য পাশে নতুন ভবন করা হোক ।
খয়ের চাড়া মাঠপাড়া মসজিদ ও ঈদগাহের সভাপতি শাজাহান আলী জানান, জন্মের পর থেকে এই মাঠে আমরা ঈদের নামাজ আদায় করে আসছে । সেই থেকে এই ওয়ার্ডে কেউ মারা গেলে একমাত্র এই মাঠেই জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু বিদ্যালয় তিন বিঘা জমি থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ঈদগাহ ও জানাজার নামাজ আদায়ের মাঠটি নষ্ট করে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সময় তিনিসহ মসজিদের মুসল্লিগণ ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান ।
মানববন্ধনে তারা জোর দাবি জানান, নতুন ভবনটি বিদ্যালয়ের অন্যপাশে নির্মাণ করা হোক । যেন বিদ্যালয়ের নতুন ভবন পায় সেই সাথে ঈদগাহ খেলার মাঠে সচল থাকে। এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বসেই নতুন ভবন নির্মাণের জায়গা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । আমরা খুব দ্রুতই নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করব ।
এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল জানান, ওইখানে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে স্থান পরিবর্তন করে অন্যপাশে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে । তবে খেলার মাঠ বা অন্যান্য কিছু কম্প্রোমাইজ করে আমরা কিছু করছি না । বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকবে সেই সাথে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর খোলা মাঠের যে দাবি সেটা বিবেচনা করে কাজ করা হবে । তবে গ্রামবাসী চাইলে আমাদের সাথে দেখা করতে পারে বসতে পারে।