রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন

ম‌র্গে লাশ আট‌কে রাখায় জ‌ড়ি‌তদের বিরু‌দ্ধে ব‌্যবস্থার নি‌র্দেশ হা‌নি‌ফের

মো. মোমিন ইসলাম, কুষ্টিয়া / ৪৬৮ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১, ৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

১৩ বছরের ছেলের লাশ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে গিয়েছিলেন ভ্যানচালক বাবা। কিন্তু তাঁকে ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ মর্গের ডোম লাশ বের করতে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। এ টাকা না দিতে পারায় লাশ আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে।

দিনভর এমন ঘটনা জানাজানি হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লাশ হস্তান্তর হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে এ ঘটনা ঘটে। তবে টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মর্গের ডোম লক্ষণ।

বুধবার বেলা ১১টায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা পর্যদের সভাপতি ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মর্গে টাকার জন্য লাশ আটকে রাখার বিষয়টি জেনেছি। এর সঙ্গে যাঁরা যাঁরা জড়িত, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দৌলতপুর উপজেলার গাছেরদিয়াড় টলটলিপাড়ার হতদরিদ্র ভ্যানচালক কমল প্রামাণিকের ছেলে শান্ত (১৩) সোমবার সন্ধ্যায় মায়ের ওপর অভিমান করে নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করে। তাকে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে লাশ মর্গে পাঠানো হয়।

 

মঙ্গলবার বিকেলে মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভ্যানচালক কমল প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে ওরা আমার ছেলের মরদেহ দেখিয়ে বলে, বুকের অর্ধেক কাটলে ৫ হাজার, পুরো কাটলে ১০ হাজার আর কপাল কাটতে আরও ছয় হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। তা না হলে লাশ কাটা হবে না। গরিব মানুষ, আমার এত টাকা নেই বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা। পুলিশের সামনে ডোমরা ওই টাকা দাবি করে।’

ভ্যানচালক কমল প্রামাণিক অভিযোগ করে বলেন, ‘রাতে লাশ মর্গে ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে লাশ পাহারা দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন দুজন ডোম। গরিব মানুষ, টাকা কোথায় পাব, এ কথা বলতেই রেগে ওঠে তারা। পরে আমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে দিয়ে রাতে বাড়ি চলে যাই। সকালে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবার ৭০০ টাকা, পরে আরও ১০০ টাকা নেয়। বিকেলে লাশ দেওয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা দাবি করে।’

মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা মর্গের সামনে গেলে ডোমরা তাড়াহুড়া করে লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেন।

শান্তর চাচা মামুন বলেন, ‘মর্গের সামনে মঙ্গলবার বিকেলে দুই ডোম ও একজন পুলিশ সদস্য এক টেবিলে বসে ছিলেন। পাশে শান্তর আব্বা দাঁড়িয়ে টাকা নিয়ে কথা বলছেন। এ সময় আমি মোবাইলে ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা টের পেয়ে যায়। পরে আমাকে ভিডিও করতে দেয়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের মর্গে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য হাবিব জানান, ‘তাঁর সামনেই ডোমরা টাকা দাবি করেছে। আমি তাঁদের কোনো কিছু বলিনি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের মর্গের ডোম লক্ষণ জানান, তাঁদের কাছে কোনো টাকা দাবি করা হয়নি। তাঁরা ইচ্ছা করে লাশ ফেলে রেখেছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর