সংক্রমণের ভয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরা কেউ লাশ দাফনে এগিয়ে আসছে না। আর ওই পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশ দাফনে এগিয়ে আসেন কুষ্টিয়ার খোকসায় হাফেজ সালাউদ্দিনসহ স্বেচ্ছাসেবী পনেরোজন যুবক ও নারী।
সালাউদ্দিন ও তাঁর টিম একে একে ১১ জনের লাশ দাফন করেন। মহামারি করোনাকালে নিজেদের নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি আগামীতেও মানবসেবার এমন কাজে মধ্যে মানুষের পাশে থাকতে চান তাঁরা।
বুধবার (৩০ জুন) উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের গণেশপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আব্দুল খালেক চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয়। তার দাফন কার্য সম্পন্ন করেন। হাফেজ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে পনেরোজন যুবক ও নারীর অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে করোনায় মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফন করার কাজে এগিয়ে এসে।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) উপজেলার হাফেজ সালাউদ্দিনের সাথে কথা হয়। এই কাজ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা, সহযোগিতাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন কুষ্টিয়ার সময়ের এই প্রতিবেদকের কাছে।
দাফন কার্য সম্পন্ন করছেন মানবতার লড়াইয়ে সৈনিকরা
হাফেজ সালাউদ্দিন বলেন, উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মারা যায় ১১ জন। এদের সকলের দাফন কার্য সম্পন্নসহ মানুষের সেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করেছে। উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফন কার্য সম্পন্ন করতে ছুটে চলে নারীসহ দুই টিমের ১৫ জন সদস্য। এ ছাড়াও নারীদের দাফন কার্য সম্পন্ন করতে রয়েছে নারী টিমও।
তিনি বলেন, একদিন সবাইকে মরতে হবে, সেই চিন্তা থেকে আল্লাহ্ ওপর ভরসা রেখে যথেষ্ট নিরাপত্তা নিয়ে লাশ দাফন শুরু করি। যেখানে স্বজন ও প্রতিবেশীরা কেউ লাশ দাফনে এগিয়ে না আসায় লাশ দাফনে উদ্যোগী হন সেই প্রথম থেকেই।
ছলছল চোখে তিনি আরও বলেন, দিন দিন আমাদের কাজের চাপ বাড়ছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু দোয়া করি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আর যাতে কাউকে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। যে স্বেচ্ছাসেবকেরা লাশ সৎকার ও দাফনের কাজ করছেন তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সার্বিক সহযোগিতাও করছেন তিনি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছায় দাফন কাজে অংশগ্রহণকারী টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, আব্দুর রাজ্জাক, জামালা উদ্দিন, সাদ্দাম হোসেন, শুয়াইবুর রহমান, আব্দুল আলিম, নুরমুসা, হাবিবুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, খলিলুর রহমান ও নারী সদস্যসহ পনেরোজন।
মানবিক এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এলাকাবাসীসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।