কবিতা সৃজনশীল মানুষের মনের খাবার। মনও খেতে চায়। তা না হলেতো মন বিষন্নতায় ভোগে। নিরন্ন, বিষন্ন মন জটিল রোগগ্রস্ত হয়, ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। তাই এ সমাজে একটা শ্রেণির মানুষ মনকে কবিতা খাওয়ায়। হ্যাঁ, কবিতায় তাদের হৃদয়কে সচল রাখে, উদ্বেলিত করে; বিনোদিত করে, করে পুলকিত’ও।
কবিতায় মানুষ পূণর্জাগরণে প্রলুব্ধ হয়। বিকশিত হয় পতিত হৃদয়ের উপলব্ধি। আশার প্রদীপ জ্বলে নিরাশার তিমিরে নিমজ্জিত মানুষের মন ও মননে। কবির হৃদয়ও থাকে পূর্ণ মানবিকতায় পূর্ণ। তাই বিশ্বাসী কবির হৃদয়ে এক ধরনের ইলহাম হয়।
স্বয়ং বিশ্বনিয়ন্ত্রক, পরম পালয়িতার পক্ষ থেকে বাণী আসে। আর কবি অক্ষর বিন্যাসে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। লিখে ফেলেন অমর বাণী সমৃদ্ধ কবিতা। পাঠকের মন-মননে পুলকের আওয়াজ ওঠে।
হ্যাঁ, আমি বলছি- কবিতার মানুষ জান্নাত-উন-নাঈম কেকার কথা। সীমানার কাঁটা তার, বিএসএফ, বিজিবির বন্দুকের নলেও আটকাতে পারেনা ভ্রমণপিপাসু কবির চিন্তাজগতকে। কবি ছুটে বেড়ান চারণের বেশে। মহাবিদ্রোহের রণতুর্যবাদক, ধূর্যটি এলোকেশের কবি কাজী নজরুল ইসলামও ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায় বলেছেন- ‘ঘোরে দেশে দেশে, চারনের বেশে/দিন যাবে এবে পান খেয়ে, ভাবনা কি?’
কবি জান্নাত-উন-নাঈম কেকা’র কবি মনও ঘর সংসার সামালের পাশাপাশি যেন ঘুরে ফিরে আসে আকাশ-পাতাল, সাগর-নদী, গিরি বা বন- সবখানে। লিখে চলেছেন বিরামহীন।
বলছি আজ কবি ও অনুগল্পকার জান্নাত কেকার কথা। আজ ১২ই সেপ্টেম্বর। জানতে পারলাম সুষুপ্ত সংশয় লালিত কবি জান্নাত কেকার আজ ৩৬তম জন্মদিন। আজকের এই শুভক্ষণে এই কবি ও গল্পকারকে নিয়ে দু’কলম লিখতে বসে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কবির জন্ম কুষ্টিয়ার খোকসার শিমুলিয়া গ্রামে। পড়াশোনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে। শেষ করেছেন- স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর। লেখালেখিতে দারুণ স্বাছন্দ তার।
তার সকল স্বত্তা জুড়ে কবিতার মিছিল হয়। শব্দ হয়-
‘কেউবা বলে হার্ট আবার
কারো কাছে দিল
আমারতো ভাই হৃদয় ভাল
থাকলে মনের মিল।’
মূলত এ কবির অধিকাংশ কবিতায় মুক্তি এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের পাতায়। এ ছাড়া তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সুষুপ্ত সংশয়’ ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই কবিকে অনুসরণ করছিলাম ২০১৭ সাল থেকে।
আমার মনে হয়েছে, তিনি একজন শক্তিমান কবি হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি নিষ্কলুষ দরদ আর ভালোবাসায় পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্রের ছাত্রের হাতে আইন ব্যবসার মত জটিল পেশা থেকে সরিয়ে এনে তার হাতে কবিতার শক্ত ভিত রচনা করে দিতে। এ যেন- কবি মনের সরলতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ! ‘আত্মরক্ষা’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
’সোজা আঙুলে উঠছেনা ঘি?
আঙুল টাকে বাঁকাও
বদলে যাওয়া যুগের সাথে
তাল মিলিয়ে আগাও।’
প্রতিবাদের ভাষায় দৃঢ়তা বিদ্যমান। সাধারণ চলমান জীবনের ভাবাবেগ, সংগতি-অসংগতির কত কিছুই না ধরা পড়ে কবির মানসপটে! তাই কবি দ্রোহের দাবানলে জ্বলে ওঠেন প্রতিবাদের বাক্য ছুঁড়ে মারেন অত্যাচার আর সহিংসতার বিরুদ্ধে। যেন এক একটি শব্দই প্রতিবাদের পাথর হয়ে আঘাত করেছে অত্যাচারীর বুকের ভেতর। কবি লিখেছেন-
‘একটি গালে চড় মেরেছে
আরেকটি গাল পাতো?
আত্মরক্ষায় না দাঁড়ালে
কেউ বাঁচাবে নাতো।’
পাঠক, মাঝে অপ্রাসঙ্গিক হলেও জানাতে চাই, আমি যখন শিশু ছিলাম। আব্বা পড়াতেন, ‘ভোর হল দোর খোলো/খুকুমণি ওঠো রে’… আমার তখনো মুখস্ত হতো না এসব। প্রচণ্ড মার খেতে হয়েছিল সেদিন।
আজও পারিনি ভোর হলো সম্পূর্ণ মুখস্ত করতে। আমার নিজের লেখা কোনো কবিতাও মুখস্ত করতে পারিনি আজ পর্যন্ত। মনে আছে, সুরা বালাদ/ত্বরিক মুখস্ত করার জন্য বলেছিলেন, নোয়াখালীর ক্বারী সাহেব। না পেরে খুব কেঁদেছিলাম, সেই ছেলেবেলায়।
কিন্তু অবাক হলাম কবি জান্নাত কেকার ‘দিল্লী কা লাড্ডু’ কবিতার কটি পঙক্তিমালা-
’পাশের বাসার ফজলু সাহেব
তোমার চেয়ে ভালো।
চরিত্র তার ফিলিপস বাত্তি
রঙ টা শুধুই কালো।’
অল্পতেই আমার মুখস্ত হয়ে গেল কবিতাটি। আর হয়েছে এ জন্যই, কবি স্বরবৃত্তে খুব সহজ-সরল ভাষায় বেশ পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন বলেই।
আমি আশাবাদী প্রতিভাবান এই কবির হাত ধরেই বাংলা ভাষা সাহিত্য ভাণ্ডার ঋণী হয়ে থাকবে। কবির ৩৬তম জন্মবার্ষিকীতে অফুরন্ত ভালোবাসা আর শুভকামনা এই কবি ও অনুগল্পকারের জন্য….