উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জনপ্রিয় হতে থাকে এই দলটি। ৮০ দশকের দিকে পরিপূর্ন জনপ্রিয়তা লাভ করে শেরপুর জেলা বিএনপি। বর্তমানে শেরপুর সদর আসন বিএনপির ঘাটি বা ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেও প্রায় ৪৫ বছর যাবত শেরপুর সদর-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের বা বিএনপির সংসদ সদস্য নেই। সাধারন ভোটার এবং প্রবীন বিএনপি নেতাদের দাবি দলীয় কোন্দল এবং সঠিক নেতৃত্বের কারনে দলটির সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও বার বার সদর আসন হারিয়েছে বিএনপি।তবে এবার আশার আলো দেখছেন শেরপুর সদর আসনের ভোটার এবং দলীয় নেতৃবৃন্দরা।শেরপুর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক বলেছেন দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা দলকে সুসংগঠিত করছি ।
জানা যায়,১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট খন্দকার আব্দুল হামিদ। সে সময় তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু ২ বছর বাকী থাকতেই ভেঙ্গে যায় সংসদ। খন্দকার আব্দুল হামিদের পর যোগ্য নেতা এবং রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে এ আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বিএনপির। মাঝে দীর্ঘ সময় বিরতির পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ১৫ দিনের জন্য এমপি হয়েছিলেন বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী (সচিব) নজরুল ইসলাম।
১৯৮৬, ৮৮ ও ৯১ এর নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় পার্টি থেকে টানা তিনবারের জন্য এমপি নির্বাচনের হয় শাহ রফিকুল বারী চৌধুরী। এরপর ১৯৯৬ সালে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আতিউর রহমান আতিকের বিজয়ী হয়।
তারপর ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিউর রহমান আতিক বার বার বিজয়ী হন। ফলে বিএনপির ভোটাররা হতাশ হয়ে পড়েন এবং অনেক ভোটার ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলে যায়। যদিও ১৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান আহ্বায়ক মোঃ হযরত আলী জেলে থাকার কারণে তার মেয়ে ডা: সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
বাবার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হুইপ আতিউর রহমানের ভীত কাঁপিয়ে দেন প্রিয়াঙ্কা। দুপুর ১২টার মধ্যে ৩৫ হাজার ভোট পান। এরপর কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান প্রিয়াঙ্কা। বর্তমানে ৪৫ বছর পর আবারও আশায় বুক বেধেছে শেরপুর বিএনপি তথা সদর উপজেলাবাসী।
দলের নেতাকর্মীরা জানায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রায় আট বছর দায়িত্ব পালন কালে দলকে সুসংগঠিত করেছেন মোঃ হযরত আলী। ফ্যাসিস্ট আওয়াামী লীগের নিপীড়ন অত্যাচার ও মামলায় হেনস্থার শিকার শত শত নেতাকর্মীর পাশে ছিলেন হযরত আলী। এই আট বছরে তিনিও নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জেল খেটেছেন প্রায় ৩২ মাস। আর মামলা খেয়েছেন ৪৫টি। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সহায় সম্বল প্রায় ধ্বংসের পথে। এই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই সদর উপজেলার কুসংহাহাটি এলাকায় তার নিজস্ব রোজবার্গ অটো রাইস মিলে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট পুলিশ হামলা চালিয়ে রাইস মিলের প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়ে নষ্ট করেন।
তবুও তিনি প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন দলের নেতাকর্মীদের ভালো রাখতে। বিপদ আপদে পাশে থেকেছেন তৃণমূলসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী ছাড়াও এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষের।ক্ষমতার পট পরিবর্তনে জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভীষণ আতঙ্কে ছিল। পরে তাদের ডেকে নিয়ে অভয় দিয়েছেন। রাত জেগে বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারা দিয়েছেন।
আরো জানা যায়, চলতি বছরের ৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির ৩ সদস্যের নতুন আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহবায়ক হয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ হযরত আলী। ফলে এলাকায় তাকে আলোর দিশারী হিসেবেই দেখছে সাধারণ মানুষ। নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত।
নতুন আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হিসেবে হযরত আলী দায়িত্ব পাওয়ার পর দলের যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতা আব্দুল আউয়াল চৌধুরী বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে নতুন আহবায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া শেরপুর সদর-১ আসনে দীর্ঘদিন থেকেই আমরা ধানের শীষের এমপি পাচ্ছি না। এবার সে আসার আলো জেগে উঠেছে।
সাবেক ছাত্রদল নেতা ফজলুর রহমান তারা বলেন, হযরত আলী আহ্বায়ক হওয়ার পর থেকেই দলের ভিতরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই দলকে সংগঠিত করতেও কাজ করে যাচ্ছে। ফলে শেরপুর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে তিনি ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ শওকত হোসেন বলেন, আমাদের নেতা মোঃ হযরত আলী দীর্ঘদিন থেকেই দল এবং এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন। এবার শেরপুর-১ সদর আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী করতে আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নিয়ামুল হাসান আনন্দ বলেন, নতুন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আমরা একজন ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা পেয়েছি। যার ফলে দীর্ঘদিন পর শেরপুর-১ সদর আসনে ধানের শীষের এমপি পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হয়েছে।
শেরপুর জেলা বিএনপির প্রবীন রাজনীতিবিদ হাতেম আলী বলেন, যদিও এক সময় আমাদের জেলা বিএনপিতে যোগ্য নেতার অভাব ছিলো এবং দলকে পরিচালনা করাই কঠিন ছিলো। কিন্তু আমরা যোগ্য নেতা পেয়েছি এবং দলের ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরে ছিলো হযরত আলী। শেরপুর বিএনপিকে এগিয়ে নিতে টাকা পয়সা থেকে শুরু করে সব রকম সহযোগিতা করেছেন তিনি।
শেরপুর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক হযরত আলী বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা দলকে সুসংগঠিত করছি এবং জনগনের আস্থা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি। শেরপুর সদর আসনের জনগন ধানের শীষের এমপি পায়নি। তবে এবার শেরপুর বিএনপি সহ সাধারন ভোটাররা সেই আশার আলো দেখছে।
You must be logged in to post a comment.