সমাজকর্মী হাসিনুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে দৌলতপুরে ফের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল-সভার পর রবিবার বিকালে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হলো নিহত হাসিনুরের নিজ ইউনিয়ন ফিলিপনগরে।
গেল শনিবার ২৯ আগস্ট সকালে ফিলিপনগরে বসতবাড়ির কাছাকাছি পদ্মা পাড়ে গ্রামের মোড়ে জনসম্মুখে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সমাজসেবক ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনুর রহমান কে।
ঘটনার পরপর আটক করা হয় হাসিনুরের নিকটতম প্রতিবেশী নিম্নবিত্ত,অরাজনৈতিক অশিক্ষিত মাঝ বয়েসি মজিবর রহমান কে।
জানা গেছে, অন্তত ১৫ জন মানুষের সামনে দিনের আলোতেই মজিবর ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে কোপায় হাসিনুর কে। খানিকক্ষণ পর হত্যাকারী স্থান ত্যাগ করলে মুমূর্ষু অবস্থায় ধরাধরি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয় হাসিনুর কে। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনায় দৌলতপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, হতভম্ব অনেকেই। হত্যার দিনই দলীয় কর্মী ও সমাজসেবক হাসিনুর হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন দৌলতপুর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মী।
বক্তব্যে সকলেই এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবির পাশাপাশি পরিকল্পনাকারী চিহ্নিত করার দাবি জানান। শনিবারের বিক্ষোভ মিছিল শেষে পথসভায় অন্তত ৫ জন বক্তা অভিযোগ তুলেছেন, এ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ছাদিকুজ্জামান সুমন পথসভায় তাঁর বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটার হুমকির একটি উদাহরণ টেনে বলেন, এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
সাবেক ছাত্র নেতা আতিক সরদার বলেন, শোকাবহ আগস্টে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জামায়াত-বিএনপির গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।
তবে জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা টিপু নেওয়াজ ইঙ্গিত করেন নিজ দল আওয়ামী লীগেও পরিকল্পনাকারী থাকতে পারে।
হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা ঘটনার ঘণ্টা না যেতেই ঘাতক কে আটক করতে সক্ষম হওয়ায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
এদিকে,রোববার বিকালের সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ মহিলা ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের একাধিক সদস্য, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ,যুবলীগ নেতৃবৃন্দ। প্রতিবাদ বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী,শিক্ষক ও সমাজকর্মীরাও।
নিহত হাসিনুর স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহর ফুফাতো ভাই ও রাজনৈতিক সহযোগী।
রোববারের প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সরওয়ার জাহান বাদশাহ এমপি। তিনি বলেন- এ হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। মজিবর এ হত্যা একা করেনি মন্তব্য করে এমপি আরও বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডে মদদদাতা তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।
এসময় তাঁকে (এমপি কে) হেও করতে, রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে দাবি করেন সরওয়ার জাহান বাদশাহ। তিনি উল্লেখ করেন, কিছুকিছু গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে আমার অবর্তমানে হাসিনুর দৌলতপুর চালাতো, এধরণের কথা অপপ্রচার। যখন আমাদের (এমপি’র) পরিবারে শোকের মাতম তখন এই ইস্যুতে অপপ্রচার না করে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের আহ্বান জানান এমপি।
বক্তারা বলেন, ঘাতক মজিবর কে খুনি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনার অন্তরাল খুঁজে বের করতে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কথা জানান তারা।
নিহত হাসিনুরের সহোদর সেনবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান দাবি করেন, হাসিনুরের বা আমাদের পরিবারের ব্যাক্তিগত কোন শত্রু নেই। এ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক বা অন্যকোন উদ্দেশ্যে হতে পারে।
হাসিনুর রহমান অবিবাহিত ছিলেন,মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৫৫ বছর। হত্যার ঘটনায় শনিবার রাতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় হাসিনুরের সহযাত্রী মামাতো ভাই পুলিশের সাবেক সদস্য আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে মজিবর রহমান ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামী করে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামী মজিবর রহমান আটক হলেও অন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে।
কয়েক মাস আগে প্রধান আসামি মজিবরের ছেলে খুন হয়। তার প্রেক্ষিতে মজিবর এই খুন করেছে বলে গুঞ্জন উঠলেও মজিবরের ছেলে খুনের সাথে নিহত হাসিনুরের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনার মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
আদৌও ঠিক কি কারনে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড! পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত।