শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

স্বপ্নার দেড় পোয়া চাল আর সাত হাত চালার সংসার

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৮৬ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১, ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

স্বপ্নার (২৬) বিয়ে হয় অতাবুলের (২৯) সাথে ৭ বছর আগে। বিয়ের পর থেকেই কোন দিনও এক কেজির বেশি চাল রান্না করার সৌভাগ্য হয়নি তার। দেড় পোয়া চাল রাধেন নিজের দুই শিশু সোহান(৫), সুজন (৩) ও স্বামীর জন্য । থাকেন মাত্র সাত-আট হাত লম্বায় একটি টিনের চালায় , তাও পাউবো’র ক্যানেলের ধারে।

আতাবুল হার্নিয়ার অসুখে দীর্ঘদিন ভুগছে। পৈত্রিক সম্পত্তির হাফ শতক টাকার অভাবে নিজের নামে করে নিতে পারেনি। হাফ শতক নিয়েই বা কি করবে? হাফ শতকে কি বাড়ি হয় ? তাই বড় ভাইকে ছেড়ে দিয়ে বউ ছেলেদের নিয়ে কোন মতে ঘর তুলেছে পাউবো’র ক্যানেলের সরকারি জায়গায়। সেই ঘরের এক পাশে চকি আর অন্যপাশে তিন টুকরো ইটের চুলো, সব মিলিয়ে এই তাদের সহায় সম্পত্তি।

রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা  ইউনিয়নের মাছুয়াপাড়ায় এমনই নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে এই দম্পত্তি । তাদের কষ্টের ফিরিস্তির যেন শেষ নেই । এই লকডাউনের কষাঘাত ও গত কয়েকদিনের চলমান বৃষ্টিতে তারা যেন খুদা নিয়ে অসীম তালগাছের আগায় বাবুই পাখির বাসার মত দুলছে।

তারাগঞ্জ থানার মহিলা পুলিশ সদস্য সারমিন আক্তার ও অনিমা রানি রায়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে তাৎক্ষণিক ছুটে যান আমেরিকার দ্যা ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ুয়া তরুণ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠক রুশদ আল ফেরদৌস মিশু । স্বপ্না ও আতাবুল দম্পতির  চাহিদা মত টিন, বাঁশ  ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেন । মিস্ত্রি খরচ বাবদ অর্থও দেন হাতে তুলে । রাতে বৃষ্টির পানি টিনের ফুটো দিয়ে ঢুকবে না ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্বপ্না ও আতাবুল।

রুশদ আল ফেরদৌস মিশু বলেন , আজও এত কষ্ট নিয়ে সমাজে বেঁচে আছেন মানুষ, নিজ চোখে না দেখলে মানুষ বিশ্বাসই করবে না । আমি সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে । ওদের চোখের পানি মুছে আমি হাসি ফোটাতে চাই । আল্লাহ আমাকে তওফিক দান করুক ।

স্বপ্না বলেন, রাতে ঘুম হয়না, চকির মাঝে ও  চারপাশেই পানি পরে, সারা রাত দুই ছেলেকে কোলে নিয়েই বসে কাটাই। কাপড়চোপড় ভিজে থাকে সব সময় । দিনের বেলায় কি পরে মানুষের বাড়িতে কাজে যাব সেটা নিয়েই চিন্তায় থাকি । মিশু ভাইয়ের টিন পেয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যার সমাধান হল । এখন শুধুই আমার স্বামীর চিকিৎসাটা যদি কেউ করে দিত।

আতাবুলের সাথে কথা হলে সে কান্নাজড়িত গলায় হাউমাউ করে কেঁদে বলেন , আমি আজ এত দিন বিছানায় পরে আছি , বউ মানুষের বাড়িতে খেটে কোন মতে চাল এনে সংসার চালাচ্ছে। আমি কোন কর্মই করতে পারছিনা আমার হার্নিয়ার সমস্যার জন্য। আমি ভিক্ষা চাই না , একটু সুস্থ হওয়ার সাহায্য চাই। যাতে কাজ করে আমার বউ বাচ্চার মুখে ভাত তুলে দিতে পারি । এত বড় পৃথিবীর এত মানুষ, আমার দিকে কেউ কি হাত বাড়াবে না ?


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর