কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালীর গড়াই নদীর ওপর অবস্থিত সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতু। ২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। নির্মাণের পর থেকেই গত ১৮ বছর ধরে চলছে টোল আদায়। আর কত টাকা আদায় হলে বন্ধ হবে টোল আদায়? এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই কোথাও। টোল নিয়ে এই সেতু ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্রমেই অসন্তোষ বাড়ছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালীর গড়াই নদীর ওপর সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এই সেতু ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
সেতু ব্যবহারকারীরা জানান, এই সেতু নির্মাণ ব্যয়ের কয়েক গুণ টাকা ইতোমধ্যে আদায় হয়েছে। তবুও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। এতে সেতুতে চলাচলে টোলের টাকা দিতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। টোল আদায়ের পদ্ধতি নিয়েও ক্ষোভ জানান যানবাহনের মালিক ও চালকরা। সেতু ব্যবহারকারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন টোল আদায়কারীরা। তাই অবিলম্বে ইজারা বাতিল করে টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সেতু ব্যবহারকারীরা।
মোটরসাইকেল আরোহী শাকিল আহমেদ বলেন, আমি প্রতিদিন দুইবার সেতু পারাপার হই। এতে প্রতিবার ১০ টাকা করে টোল দিতে হয়। শুনেছি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিনগুণ টোল আদায় হয়েছে। অযৌক্তিকভাবে সাধারণ চলাচলকারীদের কাছে থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমরা চাই টোল আদায় বন্ধ করা হোক।
সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত ইজিবাইক-সিএনজি যাতায়াত করে। ইজিবাইক-সিএনজি চালকরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করি। প্রতিবার যাওয়ার জন্য ১৫ টাকা আর আসার জন্য ১৫ টাকা করে টোল দিতে হয়। সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিন গুণ টাকা টোল আদায় হলেও এখন পর্যন্ত টাকা আদায় করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই।
কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকবুল হোসেন লাভলু বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাস থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রতিটি বাস থেকে ১০০ টাকা করে তোলা আদায় করা হয়। যদি সেতু নির্মাণের চেয়ে বেশি টোল আদায় হয়ে যায়, তাহলে টোল ফ্রি করে দেওয়া উচিত। টোল আদায় করা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা উপকৃত হবো।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়ার সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, ছোট ছোট যানবাহনগুলোকে নিয়ে জনগণের ভোগান্তি বাড়ানো একেবারেই উচিত নয়। এই টোল আদায় থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল মেয়াদে ৫ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০১৯ থেকে ২০২১ মেয়াদে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে ২৫ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা টোল আদায় করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। মাত্র ৯ বছরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে সড়ক বিভাগ পেয়েছে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর আগে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্তও ১৫ বছর ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সব মিলিয়ে ১০০ কোটির ওপরে টোল আদায় করা হয়েছে। আর সেতুর নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম আজাদ খান বলেন, টোল আদায় কবে বন্ধ হবে তা নির্ভর করছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর। মন্ত্রণালয় চাইলেই কেবল মাত্র বন্ধ করা সম্ভব হবে এটি। মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া আমরা বন্ধ করতে পারি না।