রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন

সুদখোরের খপ্পর থেকে বাঁচতে ব্যবসায়ীদের আকুতি

মোশাররফ হোসেন, কুমারখালী / ৯৫ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: সোমবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২২, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চিহৃিত সুদে ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান নয়নের খপ্পরে পরে সর্বশান্ত ছয়জন ব্যবসায়ী। তাঁর হামলা ও মামলার ভয়ে পরিবার – পরিজন ও ব্যবসায়া ছেড়ে পথেঘাটে জীবন যাপন করছেন তাঁরা। এই সুদে ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে বাঁচতে এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও আকুতি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সোমবার দুপুরে কুমারখালী হলবাজার সংলগ্ন গ্রীণ রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা এমন বাঁচার আকৃতি জানায়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ব্যবসীয়ী মো. শরিফুল ইসলাম, মো. শামীম রেজা, মো. হাবিবুর রহমান, মো. সুরুজ আলী, মো. মান্নান শেখ ও মোছা. তন্নি খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে শামীম রেজা বলেন, ‘ চিহৃিত সুদে ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান নয়নের নিকট থেকে ফাঁকা চেকের মাধ্যমে দুই শতাংশ সুদে ধাপেধাপে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করি। বিপরীতে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা সুদসহ আসলের টাকা পরিষদ করি। কিন্তু নয়ন চেক ফেরত না দিয়ে আরো ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদান করে। পরে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কুষ্টিয়া বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুইটি মামলা করেন। ‘

দুর্গাপুর গ্রামের মো. মনসুর আলীর ছেলে সূতার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ চড়া সুদে নয়নের কাছ থেকে ব্যবসায়ের প্রয়োজনে ফাঁকা চেকে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা গ্রহণ করি প্রায় ৬ বছরে। বিপরীতে সুদ – আসলসহ প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে নয়ন চেক ফেরত না দিয়ে আরো ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তিনি নিয়মিত হুমকি প্রদান করতে থাকে। একপর্যায়ে ব্যবসা ও পরিবার ছেড়ে পথেঘাটে পালিয়ে বেড়াচ্ছি দীর্ঘদিন। টাকা না পেয়ে তিনি কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে।’

বাঁখই মহব্বতপুর গ্রামের শামীম রেজার স্ত্রী তন্নি বলেন, ‘ নয়নের অত্যাচারে স্বামী পলাতক দীর্ঘদিন। নয়ন উপজেলা রোডে অবস্থিত দোকানে প্রবেশ করে এবং আমাকে মারধর করে জোরপূর্বক দোকানের ড্রয়ারে থাকা ব্যাংকের স্বাক্ষরিত ও অস্বাক্ষরিত চেক বই ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আমার নামে ২০ লক্ষ টাকার একটি মামলা করে কোর্টে।’

সংবাদ সম্মেলনে দুর্গাপুরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ নয়নের নিকট থেকে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে এ যাবতকালে কয়েকটি ধাপে মোট ৩০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে তার নিকট প্রদানকৃত ফাকা চেকটি ফেরত চাইলে সে ফাকা চেকটি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়াও নয়ন বিভিন্ন ভয় ভীতি প্রদান করে। পরবর্তীতে আরও ১৬ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় প্রতারণা করে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।’

উপজেলার কুন্ডু পাড়ার বাসিন্দা সুরুজ আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ একটি ফাঁকা চেক দিয়ে নয়নের নিকট থেকে ৬ লক্ষ টাকা গ্রহণ করি। এযাবত বিভিন্ন সময় মোট ২০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে নয়নের নিকট থেকে থাকা চেকটি ফেরত চাইলে সে আরো ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে। উক্ত টাকা না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখায় এবং প্রতারণা করে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।’

উপজেলার বাঁখই গ্রামের মোঃ মান্নান শেখ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ নয়নের নিকট থেকে এক লক্ষ পাকা গ্রহণ করি। বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে তাকে চার লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।’

লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ নয়ন একজন চিহৃিত বিএনপির কর্মী ও সন্ত্রাসী। তাঁর নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই সুদে ব্যবসায়ীর ভয়ে আমরা ব্যবসা, পরিবার ও পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পথেঘাটে জীবন যাপন করছি। সুদখোরের হাত থেকে বাঁচতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সুদে ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান নয়ন ও তাঁর বাবা মাহমুদুর রহমান মানুকে মুঠোফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি কলটি গ্রহণ করেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ‘ আসাদুজ্জামান নয়নের নামে সুদে কারবারের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর