করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সব শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে। এমন গুজবে কান দিয়ে গত কয়েকদিনে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভিড় জমানোর খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র নিতে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় ভিড় করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দেশের কম্পিউটারের দোকানগুলোতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভীর। একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক আবেদনের ফলে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যাওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের অনুদান প্রদানের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে সেখানে টাকার পরিমাণ উল্লেখ ছিল না। তা ছাড়া নীতিমালা ও শর্ত অনুসারে সবাই আবেদনের যোগ্যও না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। সেই গুজবের রেশ ধরে দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে প্রত্যয়নপত্র নিতে ভিড় করেন হাজারো শিক্ষার্থী।
এছাড়াও প্রতারণা এড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্কবার্তা জারি করে। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক সতর্কবার্তায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সর্তক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
তবে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সরকারি অর্থায়নে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা দেওয়া হবে এমন গুজবে কুষ্টিয়ার কুমারখালীসহ অন্যান্য উপজেলাতেও সাধারন শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিভিন্ন নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের দোকান তারপর কম্পিউটারে দোকানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
চলতি মার্চ মাসের ৭তারিখ থেকে “আমার সরকার “নামক একটি ওয়েবসাইড থেকে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন তথ্যাদি পূরন করে তা সাবমিট করেছে। আর এর জন্য প্রথমেই একজন শিক্ষার্থীকে তার নিজ প্রতিষ্ঠানে দৌঁড়াতে হচ্ছে প্রত্যয়নপত্রের জন্য। আর নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে শিক্ষার্থীদের কোন রশিদ ছাড়াই দিতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০টাকা। আর এটা সংগ্রহের পরই ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সহ বিভিন্ন কাগজপত্র সহ যেতে হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন কম্পিাউটারের দোকানে আর সেখানে সব তথ্যাদি দিয়ে আমার সরকার ওয়েবসাইডে গিয়ে পূরন করতে হচ্ছে ফরমটি। আর এখানে সকল শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়াও ছবি উঠতে লাগছে বাড়তি ৫০ টাকা। এরপর আবার বৃত্তির লোভে দৌড়াতে হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের দোকানে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের একটি বৃত্তির কথা চিন্তা করেছে। তবে সেই শিক্ষার্থী যদি প্রতিবন্ধী, ক্যান্সারে আক্রান্তসহ বিভিন্ন দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সে বিশেষ বিবেচনায় পাবে এই সুবিধা। অথচ এর পিছনে ছুটছে কুমারখালী উপজেলার হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী। চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কম্পিউটারের দোকানে দেখা গেছে চোখে পড়ার মতো শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভিড়।
জানা গেছে, কিছু অসাধু কম্পিউটারের দোকানদাররা অনেক সময় সেই ওয়েবসাইডের কার্যক্রম সম্পুর্ণ না করেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। উক্ত সাইডে সাবমিট করলে নির্দিষ্ট একটি ট্রাকিং কোড দিচ্ছে অথচ প্রায় কম্পিউটারের দোকানদার সেটা না করে আর্থিক সুবিধা নিতে ট্র্যাগিং কোড ছাড়াই ভুয়া একটি কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে লুটে নিচ্ছে কোমল শিক্ষার্থীদের হাজার হাজার টাকা। বিশেষ করে কুমারখালী উপজেলা রোড, কুমারখালী থানার পিছন গেটের নারিকেল বাজারের আশপাশ, চৌরঙ্গী বাজার, পান্টি বাজার, মহেন্দ্রপুর বাজার, শিলাইদাহ বাজার, আলাউদ্দিন মোড়সহ উপজেলার ভিভিন্ন দোকানে এমন কাজ পরিচালোনা হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রশিদ জানান, সকল শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়া হবে এটি একটি গুজব। বিষয়টি আমিও শুনেছি তবে প্রতিবন্ধী, ক্যান্সারে আক্রান্তসহ দূরারোগ্য রোগীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী তহবিল থেকে একটি অনুদান আসবে বলে একটি বিঞ্জপ্তি পেয়েছি। আর প্রত্যয়নপত্র কেনো নেওয়া লাগবে সেটা জানা নেই আমার, আর এর জন্য কোন টাকা নেবার কথা না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
গত ৭ মার্চ রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাই করে অনুদান দেওয়া হবে, সবাইকে নয়। এই বিষয়ে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
এমন অবস্থাতে সাধারন শিক্ষার্থীরা ফরম পূরনে যে টাকা অযথা ব্যয় করছে তার কোন সফলতা আসবেনা, বরং অহেতুক এমন দৌড়ঝাঁপ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।