একশো বছরের সংস্কৃতির ইতিহাস প্রথা হয়ে বয়ে চলেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মাপাড় বৈরাগীর চর এলাকায় ভাদু শাহ্’র আস্তানায়। প্রতিবছর চৈত্রের ভরা পূর্ণিমায় সাধু-সন্ন্যাসী-বৈরাগীরা মশগুল হতেন ভাব তত্বের জানাশোনায়। ভরা পদ্মার তীরে সবুজে ঘেরা পরিবেশে ভাদু শাহ্’র একান্ত নিবিড় জীবনযাপনে মাঝেমধ্যে বসা হতো কৃষক-শ্রমিক খেটে-খাওয়া মানুষদের নিয়েও। অনেকেই নানা জটিলতার পরামর্শের জন্য ছুটে আসতেন ভাদু শাহ’র কাছে।
আসরের মূল কেন্দ্র ভাদু শাহ্য়ের মৃত্যুর পর অনুসারী ও স্বজনদের উদ্যোগে পরিচালিত হয় সাধক ভাদু শাহ্য়ের আস্তানা। স্বাধীনতা পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে দুই বাংলার ভক্ত-আশেকরা এখানে জমায়েত হলেও মূলত ১৯৮৫ সাল থেকে চৈত্রের ভরা পূর্ণিমায় ভাদু শাহের বাস্তুভিটা ও সমাহিত করার স্থানে আয়োজন হয়ে আসছে সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলার।
জানা গেছে ভাদু শাহ্’র প্রকৃত নাম ভাদু মোল্লা, মুসলিম গৃহস্থ পরিবারে চার ভাইয়ের মধ্যে মেজো ছিলেন তিনি। জীবদ্দশা বৈরাগ্য ও মানব দর্শনের ভাব সাধনায় পার করেন তিনি। পদ্মা নদীর পাড়ে ভাদু শাহ’র চার চালা শনের ঘর সময়ের প্রয়োজনে এখন আধাপাকা। ১৯৩৯ সালে তার বার্ধক্যজনিত মৃত্যু হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্তমান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী মোল্লা বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাদু শাহ’র টানে এখানে মানুষ সারাবছরই আসেন। চৈত্রের পূর্ণিমায় ভাদু শাহ’র প্রথা অনুযায়ী বছরে একবার আমরা তাঁকে স্মরণ করে সাধুসঙ্গের আয়োজন করি, ভক্ত দর্শনার্থীরা আসেন, গ্রামীণ মেলা বসে।
মাটির রাস্তার ভাঙাচোরা যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভাদু শাহ’র দর্শন, ইতিহাস বা লোক সংস্কৃতি হুমকির মূখে বলে দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর। অনেকেই অভিযোগ তোলেন পরিচালনার ব্যর্থতায় ভাদু শাহ’র ইতিহাস ছড়িয়ে পড়া পিছিয়ে থাকছে। ভাদু শাহের আস্তানায় কমিটি’র পর্যাপ্ত আয় থাকলেও নিদর্শন টিকিয়ে রাখতে নেয়া হয় না উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা, এমনকি বার্ষিক বড় আয়োজনেও ভক্ত দর্শনার্থী ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাধু ফকিরেরা থাকেন নানা ভোগান্তিতে। এখানে সরকারি নজরদারি ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করলে এবং প্রচলিত থাকা অলৌকিকতার গল্প জানা গেলে ভক্তরাই ভাদু মোল্লার নাম দেন ভাদু শাহ্। এই সাধক তার কোনো পদ বা বাক্য বানী হাতে-কলমে লিখে যেতে না পারলেও, গ্রামীণ সংস্কৃতিতে গান হিসাবে ছড়িয়ে ছিলো দু’একটি। শতবর্ষ অবহেলায় কেটে গেলে দুএকটি কণ্ঠে সে গানও এখন নিভু নিভু।
বার্ষিক আয়োজনে এখানে প্রতিদিন জড়ো হোন হাজারো মানুষ। পদ্মাপাড়ের এই নিদর্শন হতে পারে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণের। জনশ্রুতি আছে প্রমত্ত পদ্মা সবদিকে ভাঙন তৈরি করলেও ভাদু শাহ’র ধ্যানমগ্নের স্থানে এসে বার-বার থেমে গেছে ক্ষর স্রোত। নদী ভাঙনের হাত থেকে বেঁচেছেন ভাদু শাহ’র গ্রামবাসী।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমরা দাপ্তরিক ভাবে ভাদু শাহ্’র ইতিহাস জানার চেষ্টা করবো, স্থানটি পরিদর্শন করবো, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগের প্রয়োজন হলে অবশ্যই সেটা নেয়া হবে।