শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

যার কারিগরি দক্ষতা আছে, তাকে বেকারত্ব স্পর্শ করতে পারে না: ড. নার্গিস আফরোজ

কুষ্টিয়ার সময় ডেস্ক / ১৯৬ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

 

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আটিগ্রামে জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিকী টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউট এর গত ১৯ ডিসেম্বর শুভ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. নার্গিস আফরোজ সমবেত হাজার হাজার জনগনের উদ্দেশ্যে প্রাণবন্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্যের পূর্ণরূপ তুলে ধরা হলো-

আমন্ত্রিত অতিথি ও সমাগত সুধীমন্ডলী, আসসালামু আলাইকুম।

মহান স্বাধীনতা বাঙালী জাতির অনবদ্য শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ৫০ বছর পালন করছে বাংলাদেশ। সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের ও সম্মানের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের এই ঐতিহাসিক মহেন্দ্রক্ষণে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আত্ম-কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদের আশা আকাঙ্খার এই প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে।

শিক্ষা মানুষের সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায়। জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে সামর্থ্য ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। কর্মমুখী শিক্ষা হচ্ছে জীবিকা অর্জনের জন্যে সম্ভাব্য পেশাগত কর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষা। আমাদের দেশে এখনো কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেনি। ফলে প্রচলিত পন্থায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নিয়ে লাখ লাখ উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতী বেকারত্বের চরম অভিশাপ নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত।

সুধীমন্ডলী, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব যে অপরিসীম তা আমরা অনেক আগে থেকেই অনুভব করতে সক্ষম হই। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে অতি সম্প্রতি শিক্ষার মান উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা দেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ ও খসড়া শিক্ষা আইন-২০১৬’ প্রণয়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই উপলব্ধি করেছেন, যে দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যত বেশি; সে দেশের জনগনের মাথাপিছু আয় ততবেশী। তাই তিনি এ দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের আগেই কারিগরি শিক্ষার হার ২০ শতাংশ করা, ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ, ২০৪০ সালে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে কাঙ্ক্ষিত গুনগত মানের দক্ষতা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। বাস্তব কর্মক্ষেত্র থেকে দক্ষ জনবলের অভাবের কথা বলা হয়ে থাকে। ফলে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতসহ অন্যান্য দেশের দক্ষ জনশক্তি বাংলাদেশে কাজ করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও দক্ষ জনবলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার আরও সম্প্রসারণের জন্য মানসম্মত কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবী। সেকারনে কারিগরি শিক্ষাকে উপজেলা পর্যায়ে অর্থাৎ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। আশা করি এর ফলে মেধাবী ছেলে-মেয়েরা কারিগরি শিক্ষায় উৎসাহিত হবে। আমরা মনে করি কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশে গত ৫ বছরে প্রযুক্তিনির্ভর কাজের সংখ্যা বেড়েছে অনেক, তবে সে তুলনায় প্রযুক্তিনির্ভর কর্মীর সংখ্যা খুব কম। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর তরুণদের নাম লেখাতে হচ্ছে শিক্ষিত বেকারের তালিকায়। বর্তমান ও ভবিষ্যতের পৃথিবীতে কারিগরি দক্ষতাই বড় ভূমিকা রাখবে। মনে রাখতে হবে, শুধু সচেতনতা ও দক্ষতার অভাবে আমরা আমাদের আশেপাশে থাকা সুযোগ গুলোকে কাজে লাগাতে পারি না। শিক্ষা জীবন শেষে পাশ করে ব্যবসা বা চাকরির প্রস্তুতি নেব, এমন সময় সম্ভবত আমাদের আর নেই। বিষয়টি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের এই মুহূর্ত থেকে গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করতে হবে। পরিশেষে আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, যার কারিগরি দক্ষতা আছে, তাকে বেকারত্ব স্পর্শ করতে পারে না।

আমাদের আকাঙ্খার জায়গাটা অনেক বড়। আজকের এই নবজাতক কারিগরি প্রতিষ্ঠানটি যুগের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হতে পারে সে প্রচেষ্টা যেমন আমাদের অব্যাহত থাকবে। অনুরূপভাবে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা আমাদের স্বপ্ন পুরণে সহায়ক হবে।

সর্বোপরি আপনাদের আগমনে আমরা অনুপ্রাণিত ও অভিভূত হয়েছি। আপনাদের সরব উপস্থিতিতে আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানটি হয়েছে মহিমান্বিত। আজকের এই অনুষ্ঠান স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেকদিন পর্যন্ত। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে শেষ করছি।
খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সভাপতি, গভর্নিং বডি, জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিকী টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউট আটিগ্রাম, মিরপুর, কুষ্টিয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর