শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন

মাগো আমারে বাঁচাও, আমি শ্বাস লইতে পারতাছি না

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৬১৮ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১, ৪:০২ অপরাহ্ন

পাগলের মতো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জুস কারখানার সামনে ঘুরছিলেন কম্পা রানী বর্মণের মা সুমা রানী বর্মণ ও তার পরিবারের লোকজন। তাদের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় কম্পা রানীর শেষ কথা হয়েছিল, মাগো আমারে বাঁচাও। আমি শ্বাস লইতে পারতাছি না। আমি বুঝি আর তোমাগো দেখতে পারমু না।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামে একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত মোট ৫২ জন নিহত হয়েছেন। লাশের অপেক্ষায় স্বজনদের কান্না থামছে না।

রোববার দুপুরে কারখানার সামনে ও কারখানার বাহিরে নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে। স্বজনদের একটাই দাবি- সবাই তাদের স্বজনদের লাশ দ্রুত ফিরে পেতে চান। আর এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। এ মর্মান্তিক ঘটনায় রূপগঞ্জের চারপাশ শোকাহত। স্বজনদের কান্নায় কারখানার চারপাশ ভারি হয়ে গেছে। স্বজনরা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডিএনএর নমুনা দিয়ে আসেন। তবে তিন সপ্তাহ পরে লাশ শনাক্ত হবে বলে জানায় ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ।

অগ্নিকাণ্ডে ভবনের চতুর্থ তলার সেলিনা আক্তারের (১৩) বাবা সেলিম মিয়া। মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় তিনি। বারবার দৌড়ে চলে যাচ্ছেন ওই ভবনটির সামনে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, একবার মাইডারে তোমরা দেখতো দেও বাবা। আমার মাইয়ারে কেন কাজে পাঠাইলাম।

কারখানার বাইরে কাঁদছিলেন নিখোঁজ তুলি আক্তারের মা ও বাবা আব্দুল মান্নান। মধ্যবয়সী নারী বলছিলেন- একবার মা কইয়া ক আমারে। আমি তোরে ছাড়া কেমনে থাকমু। কারখানার মালিকরা সব গেট বন্ধ কইরা দিছিল। প্রত্যেকটা গেট তালা দিয়ে সব মানুষগুলারে মারছে।

এদিকে রোববার সকালে গিয়েও ওই ভবনটি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ভবনটির বেশকিছু অংশে বড় বড় ফাটল দেখা গেছে। ভবনের পলেস্তারা ও বেশকিছু অংশ ধসে পড়েছে। ফাটল দেখা দেওয়ার কারণে ভবনটিকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয়। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটির আশপাশে থাকা বসবাসকারী সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। যেকোনো সময় ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে।

ভবনটির পাশে বসবাসকারী টিটু মিয়া জানান, শুনেছি ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এতে আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ কারণে ভবনটি দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভেঙে ফেলার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এছাড়া ভবনে কিছু অংশে এখনো ধোঁয়া উঠতে থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মীকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। নতুন করে আবার ধোঁয়া উঠতে দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর