করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৮মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে অভিভাবকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি নেবে মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের এমন সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে টিউশন ফির সাথে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে কুষ্টিয়ার জেলা স্কুল ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়।
জানা যায়, ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত ওএম/৯১-সম/২০০৮-২৪৮ নম্বর স্মারকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি গ্রহণ করা যাবে। তবে অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি নেয়া যাবে না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা নিয়ে থাকলে তা ফেরত দিতে হবে অথবা টিউশন ফির সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে।
নির্দেশনাটি সরকার দিলেও তা মানছে না কুষ্টিয়া জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলতি মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে কম্পিউটার ও আইসিটি খাতে অর্থ আদায় করেছে এই দুই সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে প্রভাতী ও দিবাশাখা মিলে মোট ২ হাজার ৩৫৯ জন ছাত্র অধ্যয়নরত এবং কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দুই শিফট মিলে ২ হাজার ২৭৪ জন ছাত্রী অধ্যয়ন করে। উভয় স্কুলই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কম্পিউটার ও আইসিটি খাতে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০ টাকা করে আদায় করে থাকে। এতে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল প্রতি মাসে প্রায় ২৯ হাজার ৪৮০ টাকা আর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রায় ২৮ হাজার ৪২০ টাকা মূল বেতনের সাথে কম্পিউটার ও আইসিটি খাতে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায় করেছে।
দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধ থাকার সময়েও এটা বন্ধ হয়নি। যা মাউশি তথা সরকারি নির্দেশনার পরিপন্থী। করোনার এই বন্ধ থাকার সময়েই কুষ্টিয়া জিলা স্কুল বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায় করেছে ৫ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা আর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আদায় করেছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪০ টাকা।
প্রজ্ঞাপন বর্হিভূত দুটি খাতে অর্থ আদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ অর্থ আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। তাদের দাবি দ্রুত তদন্ত করে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এফতেখাইরুল ইসলাম বলেন, আইসিটির জন্য অর্থ আদায় করার অনুমোদন আছে। এ খাত থেকে কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ ও ল্যাব পরিচালনার খরচ মেটানো হয়।
আর কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা. মোজাম্মেল হক বলেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও কম্পিউটার ও আইসিটি সংক্রান্ত কাজ সবসময়ই করতে হয়। এ খাতে বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার জায়েদুর রহমান বলেছেন, মাউশির বিঞ্জপ্তিতে এ্যসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ ফি না নেয়ার কথা বলা আছে। তবে কম্পিউটার ও আইসিটির কথা উল্লেখ নেই।