গত ১০ আগষ্ট হঠাৎই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পরিদর্শন করতে যান শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। তার এই ঝটিকা ভিজিট কে কৌশলে অনুষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে, ১০ লক্ষ্যাধিক টাকা ভাগাভাগি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে। এর বেশিরভাগ অর্থ উত্তলন হয়েছে উক্ত সেমিনারে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানীর নামে। বোর্ডের নিয়মিত কর্মকর্তা সহ মাস্টাররোল ও ডেইলিবেসিসে থাকা কর্মচারীদের নামেও উক্ত সম্মানীর টাকা উত্তলন করা হয়েছে। কিন্তু মতবিনিময় সভায় কিছু কর্মকর্তা ছাড়া কোন কর্মচারীকে দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই আয়োজনকে কোন ভাবেই সেমিনার হিসাবে দেখানো সম্ভব নয়। কারণ সেমিনারের জন্য কোন পূর্ব প্রস্তুতি বা নোটিশ দেয়া হয়নি। মন্ত্রীও আমন্ত্রিত হননি। অনুষ্ঠানের ব্যানারেও লেখা দেখা গেছে মত বিনিময় সভা, সেমিনার নয়। অন্যদিকে বিধি অনুযায়ী মাস্টার রোল বা ডেইলি বেসিসে চাকরিরত কেউই এরকম সেমিনার থেকে সম্মানী পাওয়ার কথা না। মন্ত্রীর ঝটিকা সফর কে উপলক্ষ বানিয়ে এই টাকা উত্তলনর বৈধতা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। টাকা উত্তোলন হালাল করতে, উত্তোলন করা টাকা হতে ৫০ হাজার টাকার একটি প্যাকেট চেয়ারম্যান উপমন্ত্রী কে দেবার চেষ্টা করে ব্যার্থ হন।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোরাদ হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে অফিস সময়ে অযাচিত মিটিং, সেমিনার, ওয়ার্কসপ দেখিয়ে, নিয়মবহির্ভূত ভাবে এরকম প্রতিনিয়ত সম্মানী উত্তোলন করা হয়। সরকারি চাকুজীবিদের দিনে দুইয়ের অধিক সম্মানী নেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থাকলেও চেয়ারম্যান দিনে ৪/৫ টি সম্মানী নিয়েছেন এরকম অভিযোগও আছে। বর্তমান চেয়ারম্যান যোগদানের পর থেকে এধরনের দুর্নীতি অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
চেয়ারম্যানের যোগদানের পর থেকে বোর্ডের নিয়মিত ক্রয়- কেনাকাটা সহ সর্বত্র দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সরকারি বিধি মোতাবেক ১০ লাখের অধিক টাকার ক্রয় করতে টেন্ডারের প্রয়োজন হয়।অথচ টেন্ডার ছাড়াই, কাজ ভেঙ্গে ভেঙ্গে চেয়ারম্যানের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ডিরেক্ট পার্সেস বা ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। অনেক সময় কোন বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই কাজ করিয়ে ব্যাকডেটে প্রয়োজনীয় কাগজাদী প্রস্তুত করা হয়।
অভিযোগ আছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব ও তার সহধর্মিণী কে সাথে নিয়ে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের নামে এরকম ঝটিকা অভিযান করে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা লুটপাট করা হয়েছে এই চেয়ারম্যান এর আমলে। উক্ত সচিব এর ছেলের রেফারেন্স বিজ্ঞাপন বানাবার কাজ দেয়া হয়েছে কোন একটি অজ্ঞাত প্রতিষ্ঠানকে, যেই বিজ্ঞাপনচিত্রে সচিব এর ছেলে নিজেই মুল চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
এর আগে যুগান্তর সহ একাধিক গণমাধ্যমে এসব খবর এলেও কোন একটি অজ্ঞাত কারনে এই বিষয়ে কোন অনুসন্ধান হয়নি। গণমাধ্যম থেকে চেয়ারম্যান কে জিজ্ঞেস করলে সবসময় তিনি দায় এমন সব জুনিয়র কর্মকর্তার ঘাড়ে গছান, যাদের এই ধরনের কাজ করার কোন ক্ষমতাই নেই।
এই বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোরাদ হোসেন মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি ফোনে বলেন -এসব অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুরাদ মোল্লা বলেন, আসলে ওত টাকা খরচ হয়নি। ভুলে এত টাকা ওঠানো হয়েছে। হিসাব নিকাশ ঠিক করা হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে তিন লাখের মত খরচ হতে পারে। কাল জানা যাবে।
একটা মত বিনিময় সভায় কর্মচারীদের সম্মানী দেওয়া কতটা যুক্তিসংগত; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মতবিনিময় সভায় সম্মানী দেওয়া যায়।
শিক্ষা উপমন্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার পর তিনি অযৌক্তিক সম্মানী গ্রহণ না করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা তাকে কোনো সম্মানী অনার করিনি।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ড একটি সায়ক্তশাশিত প্রতিষ্ঠান। একটি পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে জানা গেছে চেয়ারম্যান এসব বিষয়ে পরিচালনা পরিষদকে আড়ালে রাখেন। পরিচালনা পরিষদের নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন তদবিরের নাম পরিবর্তন করে সুবিধা অনুযায়ী সম্পাদন করেন।
এই বিষয়ে বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জনাব ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম আব্দুল হামিদ এর কাছে জানার জন্য কয়েকবার ফোন দিয়েও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।