মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে গাড়ির হেলপার মান্নান এখন কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার

কুষ্টিয়ার সময় প্রতিবেদক / ৬৯৬ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়া পৌরসভার ময়লার গাড়ির হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বর্তমান পৌরসভার সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান। হেলপার থেকে এখন পৌরসভার সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন এই মান্নান।

১৯৯৭ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন রামবাবু। এসিস্ট্যান্ট সার্ভেয়ারের পোষ্ট সৃষ্টি করিয়ে সার্ভেয়ার হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুল মান্নান।

চাকুরিতে যোগদানের আগে সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান কুষ্টিয়া পৌরসভার ময়লা টানা গাড়ীর হেলপার ছিলেন। ওই সময় চট্রগ্রাম থেকে সার্ভেয়ারের সাটিফিকেট এনে সার্ভেয়ার বনে যান মান্নান। সার্ভেয়ার হওয়ার পরই টাকার কুমির বনে গেছেন সার্ভেয়ার মান্নান। মান্নানকে তার প্রতিষ্ঠানের নাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন চট্রগ্রামের “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” থেকে সে

সার্ভেয়ার সীপ পাশ করেছে এবং প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বলে চট্রগ্রাম হালিশহর। তবে সে তার পাশের সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে প্রতিবেদককে দেখায়নি। এরপর ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচন করতে “সত্যখবর” পৌঁছে যায় চট্রগ্রাম। তখন আমাদের হাতে ছিল শুধু “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” নাম আর তার ঠিকানা হালিশহর। চট্রগ্রামে পৌঁছে আমরা জানতে পারি এখানে

হালিশহর রয়েছে ৩ টি। উত্তর হালিশহর, দক্ষিন হালিশহর আর মধ্য হালিশহর। তখন মান্নানকে কোন হালিশহরে “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” অবস্থিত এটা জানতে ফোন করা হলে সে কোন কথা না বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেয়। এরপর সে ফোন বন্ধ করে দেয়।এরপর আমাদের গন্তব্য আমাদেরকে নিয়ে যায় চট্রগ্রামের উত্তর হালিশহরের নয়াবাজার কাঁচা বাজারে অবস্থিত

চট্রগ্রাম উত্তর হালিশহর ভ’মি অফিসে। সেখানে গিয়ে কথা হয় উত্তর হালিশহর ভ’মি অফিসের সহকারী ভ’মী কর্মকর্তা হাফেজ আহম্মেদেও সাথে। হাফেজ আহম্মেদ জানান তিনি এই ভ’মি অফিসে কর্মরত আছেন দীর্ঘদিন ধওে এবং তিনি চট্রগ্রামের পাহারতলী এলাকার স্থানিয় বাসিন্দা। তিনি তাঁর ছাত্র জীবনে বা কর্মজীবনে এমন কোন প্রতিষ্ঠান দেখা তো দুরে থাক নাম পর্যন্ত শোনেননি।

তিনি আরও জানান তাঁর ১৮ বছরের কর্মজীবনে চট্রগ্রাম এলাকার বহু ভ’মি অফিসে কাজ করেছেন কিন্তু “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” নামে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে কেউ সার্ভেয়ার হিসাবে কাজ করছে এমনটি দেখেননি।এরপর পথ আমাদের নিয়ে যায় চট্রগ্রামের সিভিট ক্রসিং এর নেভিগেট সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত দক্ষিন হালিশহর ভ’মি অফিসে।

সেখানে গিয়ে কথা হয় দক্ষিন হালিশহর ভ’মি অফিসের সহকারী ভ’মি কর্মকর্তা নূরুল আজিমের সাথে। নূরুল আজিম জানান দক্ষিন হালিশহর এলাকায় “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” নামে কোন প্রতিষ্ঠান আছে বলে তিনি কখোনো শোনেননি। এই রকম ভ’য়া প্রতিষ্ঠানের নামে যদি কেউ কোন সার্টিফিকেট নিয়ে কোথাও চাকরী করে তাহলে সেটা অত্যন্ত দূঃখজনক।

এরপর আমরা পৌছে যাই মদ্য হালিশহরের ভুমি অফিসে। সেখানে গিয়ে কথা হয় মধ্য হালিশহর ভ’মি উপসহকারী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের সাথে।পঞ্চাশোর্ধ নাজিম উদ্দিন জানান তিনি মধ্যহালিশহর এলাকা সংলগ্ন বড়পুল এলাকার স্থানিয় বাসিন্দা। তিনি উত্তর-দক্ষিন ও মধ্য হালিশহরের অলিগলি সব চেনেন। তিনি কখনো “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” নামে কোন প্রতিষ্ঠানের

নাম শোনেননি বা তার চোখেও পড়েনি। মধ্য হালিশহর ভ’মি অফিসে বসে কথা হয় হালিশহর এলাকার প্রথিতযশা সার্ভেয়ার বাবুল আহম্মেদের সাথে। বাবুল আহম্মেদ আলোচনায় জানান তিনি দক্ষিন হালিশহর এলাকার স্থানিয় বাসিন্দা। বাবুল বলেন তিনি দীর্ঘ ২২-২৩ বছর ধরে তিন হালিশহর সহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পরেশন এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জমি মাপামাপির কাজ করছেন।

তিনি বলেন চট্টগ্রামে তদান্তিন সময়ে কোন সার্ভেয়ার ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছিলনা বলে আমি কুমিল্লার ময়নামতি সার্ভে ইন্সটিটিউট থেকে আমিনশিপ পাশ করেছি। বাবুল আরও বলেন “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” নামটি একটি মনগড়া নাম। এই নামে কোন প্রতিষ্ঠান তিন হালিশহর কেন পুরো চট্টগ্রাম সিটি এলাকাতেই নেই। এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল চট্টগ্রামের লালদীঘি এলাকার
জেলাপরিষদ মার্কেটে অবস্থিত “দি ময়নামতি সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট”।

সেখানে গিয়ে আমাদের সাথে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এবং চট্টগ্রাম জর্জ কোর্টের সিভিল কোর্ট কমিশনার মোঃ আব্দুল জাহের সিদ্দিকির সাথে। জাহের সিদ্দিকি জানান তাঁর প্রতিষ্ঠান “দি ময়নামতি সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটা “বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড” অনুমাদিত। তিনি তাঁর ৪০ বছরের কর্মজীবনে

“দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” নামে কোন প্রতিষ্ঠানের নাম শোনেননি বা দেখেননি। জাহের সিদ্দিকি বলেন এই প্রতিষ্ঠানটির নামের কোন অস্তিত্ব নেই। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ চাকরী কওে তাহলে সে প্রতারক। এমন প্রতারকের শাস্তি হওয়া দরকার। এরপর আমাদের কথা হয় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাদমানী

জনির সাথে। জনি মধ্যহালিশহর এলাকার বিডিআর মাঠ এলাকার স্থায়ি বাসিন্দা। গোলাম সাদমানী জনি জনান আমাদেও হালিশহর তো কনে চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকাতে “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” নামে কোন প্রতিষ্ঠান কোনদিন ছিল না। এরপর আমাদের কথা হয় দক্ষিন হালিশহর এলাকার স্থানিয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সহ-সভাপতি ফারুক হোসেনের সাথে।

ফারুক হোসেন বলেন পুরো চট্টগ্রাম মহানগরীতে আমার রাজনীতির সুবাদে যাতায়াত।এই রকম কোন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড কখনো তাঁর চোখে পড়েনি।তিনি আরও বলেন “দি ইষ্টার্ন মডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট” এর নাম যে ব্যাক্তি ব্যবহার করেছেন তিনি আসলে একটা ফ্রড। এবার আমাদের কথা হয় চট্টগ্রাম সিটিকর্পরেশন’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার সোহেল আহম্মেদের সাথে।

সোহেল আহম্মেদ জানান এই রকম কোন প্রতিষ্ঠানের নাম তিনি কখোনো শোনেননি।এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৈারসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সার্ভেয়ার মান্নান যদি সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে জাল বা প্রতারণা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সার্ভেয়ার মান্নানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে বলেন ।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর