১৫ বছর আগে মারা যান কুষ্টিয়ার খোকসার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ। তার নামে জমিও আছে আবার মাসে মাসে আসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও। কিন্তু সেই ভাতার টাকা ১৫ বছর ভাগ্যে জোটেনি অসহায় স্ত্রী রহিমা খাতুনের। স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ আশ্রয়টুকুও দখলে নিয়ে ভাসুরের ছেলে। কাঁদতে কাঁদতে কুষ্টিয়ার সময়ের এই প্রতিবেদকের কাছে এমন অভিযোগ দেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রহিমা খাতুন।
রহিমা খাতুন বলেন, কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়িপাড়ায় আমার স্বামীর রেখে যাওয়া জমিও আমার ভাগ্যে জোটেনি। যুদ্ধের পর আমরা ভারতে চলে গিয়েছিলাম। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি আমার বাবার বাড়িতে থেকেছি। মাঝে মাঝে স্বামীর বাড়িতেও এসেছি। কিন্ত আমার নিজের ঘর না থাকায় প্রতিবেশিদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থেকেছি।
রহিমা খাতুনের অভিযোগ, দেবর ওহাব বিশ্বাস (৬৫ ) ও তার ছেলে মিন্টু বিশ্বাস (৩৮) এর কাছে আমি অনেকবার জানতে চেয়েছি আমার স্বামী মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পায় কিনা? কিন্ত তারা অস্বীকার করে। ১৫ বছর পর জানতে পারি আমার স্বামী ভাতা পায়। যেটা আমার শ্বাশুড়ির নামে টাকা উত্তোলন করা হত।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় দুই শতাংশ জমিও বুঝে দিতে নানা টালবাহানা করে আসছে তারা। সেই জমির উপর উপর মিন্টু ঘর তুলে দখল করে আছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রতিবেশিরা বারবার বললেও কোনো সমাধান করেনি তারা। তাই বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও খোকসা থানা পুলিশকে অবহিত করি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা সেটা দিচ্ছে না। তবে ২০১৭ সালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাশেম তরুণের সহযোগিতায় ভাতার বই তার নামে ইস্যু করা হয়।
এ সময় তিনি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে আমি আর ভেসে বেড়াতে চাই না। আমি এখানে ঘর তুলে বসবাস করতে চাই।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার চাচাত ভাই লুৎফর রহমান বলেন, ওহাবের ছেলে মিন্টু ঘর তুলে রেখেছে। মিন্টু ঘর সরিয়ে নিলেই ঘর তুলে থাকতে পারে আমার ভাইয়ের বউ। শুধু তাই নয় ভাতার টাকাও ওরা তুলে আত্মসাত করেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওহাব বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে তার নিজের জমির উপর ঘর তুলে আছে। উনি (রহিমা) যতটুকু পাবে ততটুকুই তাকে ফেরত দেয়া হবে।
এ সময় তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তারাই তো আমার ঘর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে। সে জায়গা খালি করে দেয়ার জন্য দখলীয় জায়গার অংশ থেকে ঘর ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু তারা এখন আমার ছেলের ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মিন্টু বলেন, আমার দাদী আমার দুই চাচার থেকে আমাকে ৬০ পয়েন্ট জমি লিখে দিয়ে গেছে। আমি এর থেকে ৩০ পয়েন্ট জমি চাচির জন্য ছেড়ে দিব। আর বাকি ৩০ পয়েন্ট জমি আলমের ভেতরে রয়েছে। ওই দিক দিয়ে চাচিকে যাতায়াত করার কথা বলেছি। কিন্ত আলমের ঐ ৩০ পয়েন্ট জমি তাকে লিখে দিতে হবে। কিন্তু আমি সেটা দিব না।
৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাশেম তরুন বলেন, যখন তাদের জমি ভাগাভাগি হয় তখন আমরা মজিদের ভাগের ১ শতক ৮০ পয়েন্ট জমি আলাদা ভাবে রেখে খুঁটি গেড়ে দিয়েছিলাম। পরে আস্তে আস্তে তার জায়গাটা মিন্টু দখল করে নেয়। তারপর এক সময় মজিদের স্ত্রী এখানে আসলে তার জমি বুঝিয়ে দিতে মিন্টু গড়িমসি করে।
তিনি বলেন, পরে রহিমা খাতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করলে এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করেন। পরে কাগজপত্র যাচাই করে দেখে মিন্টু তার দাদির কাছ থেকে তার মৃত দুই চাচা মজিদ ও গফুরের জমি থেকে ৬০ পয়েন্ট জমি লিখে নিয়েছে। মা জীবিত থেকে সন্তানের মৃত্যু হলে মা আজমা সূত্রে যে জমিটুকু পায় সেটুকু কৌশলে মিন্টু তার শতবর্ষী দাদির কাছ থেকে লিখে নেয়।
এ ব্যাপারে খোকসা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মনজিল আলী বলেন, মজিদ তো ভারতে থাকতো। মজিদের স্ত্রী-সন্তানের কোনো খোঁজ আমরা জানতাম না। যার ফলে তার মায়ের নামে ভাতার কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, রহিমা খাতুন মজিদের স্ত্রী দাবি করলে তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলি। সে কাগজ পত্র জমা দিলে আমরা তার নামে বই ইস্যু করে দেই।
এ বিষয়ে খোকসা উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার ইসাহক আলী বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে উভয় পক্ষকে বলেছি আপনারা জায়গাটা মেপে আমার কাছে একটা রিপোর্ট দেন। কিন্ত তারা এখনও সেটা করেনি। যেহেতু পাবলিক প্রপার্টি তাই আইনগত ভাবেই বিষয়টা সমাধান করতে হবে।