সমাজসেবা অধিদপ্তরের বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার নাম করে কারো কাছ থেকে ৫০০ টাকা, আবার কারো থেকে নিয়েছে ৬ হাজার টাকা। এভাবে প্রায় চার বছর ধরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটা প্রতারক চক্র। অবশেষে ওই চক্রের মূলহোতা সহ দুইজনকে ধরে উত্তম মাধ্যমের পরে প্রশাসনের কাছে সোপার্দ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া এলাকা থেকে বুধবার ( ৬ নভেম্বর) দুপুরে তাদের আটক করা হয়। আর বিকেল ৪ টার দিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে প্রতারক আনিসুর রহমানকে ১৫ দিন এবং মূলহোতা বিল্লাল হোসেনকে একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরামানা প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে পুলিশ আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।
আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত।
আটককৃত প্রতারক চক্রের মূলহোতার নাম শেখ বিল্লাল হোসেন (৪৫)। তিনি সাতক্ষীরা জেলা ও থানার নলকুড়া এলাকার মৃত নুর উদ্দীন শেখের ছেলে। শারীরিক প্রতিবন্ধী এই প্রতারক একজন কাপুড়ের ব্যবসায়ী। ওই চক্রের সহযোগী আনিসুর রহমান (৩৫) একই এলাকার আব্দুল গাজীর ছেলে তিনি পেশায় একজন চা বিক্রেতা।
জোতমোড়া গ্রামের ভুক্তভোগী পলাশ শেখ বলেন, প্রতারক বিল্লাল হোসেন মাস দুয়েক আগে বাড়িতে এসেছিল। সেদিন আমার বাবাকে বয়স্ক ভাতা দেবে বলে একটি ভূয়া আবেদন ফরম পূরণ করে ৬ হাজার টাকা নিয়ে যায়। বুধবার দুপুরে ফের বাড়িতে আসলে তাদের হাতেনাতে ধরে প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
একই গ্রামের হোসেন আলী বলেন, সকালে আমার বাবার বয়স্ক ভাতার কথা বলে ৫০০ টাকা নিয়েছে। তবে আটকের পর জানলাম তারা প্রতারক। তার ভাষ্য, আটকের পর দুই প্রতারককে মারধর করেছে জনগন।
প্রতারক চক্র আটকের খবর শুনে কুষ্টিয়া মিলপাড়া এলাকা থেকে উপজেলা সহকারী কমিশনারের ( ভূমি) কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন বেসরকারি চাকুরিজীবি এনামুল হক। তিনি বলেন, আমি বাড়িতে ছিলাম না। ভুলভাল বুঝিয়ে মাসখানেক আগে আমার ছেলের কাছ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে প্রতারকরা। তিনি প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন ভাতার কথা বলে ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রতারকদের মূলহোতা বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রায় ৪ বছর ধরে কুষ্টিয়া শহরে বাড়িভাড়া নিয়ে কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতারণ করছেন তিনি। তার ভাষ্য, তার দলে তিনজন সদস্য আছে। প্রতিদিন পাঁচ – ছয় হাজার টাকা প্রতারণা করে আয় করেন তিনি।
প্রতারকের সহযোগী আনিসুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরায় আমার চায়ের দোকান আছে। তবে প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে বিল্লালেরর গাড়ি চালক হিসেবে এখন চাকুরি করছি। তবে বিল্লাল একজন প্রতারক, তা তিনি জানতেন না।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, প্রায়ই আমার এলাকায় প্রতারকরা বিভিন্ন ভাতার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যেত। তবে আজ হাতেনাতে দুইজনকে ধরে প্রশাসনের কাছে সোপার্দ করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ভাতা দেওয়া ও করে দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগে একজনকে ১৫ দিন এবং আরেকজন একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধীদের এ দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।
You must be logged in to post a comment.