বিচারালয় যেন বাণিজ্যালয়ে পরিণত না হয়, এমন আহ্বান রেখে বিচারিক দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী।
বিচারিক কর্মজীবনের শেষ কার্যদিবসে সহকর্মী, আইনজীবী ও বিচার ব্যবস্থায় যুক্তদের কাছে তিনি এ আহ্বান জানান।
সংবিধান অনুযায়ী বিচারকদের নির্ধারিত বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন অবসরে যেতে হয়। সে অনুযায়ী বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর শেষ কার্যদিবস হওয়ার কথা আগামী ২৮ জুলাই।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুযায়ী আগামী ১৮ থেকে ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি নির্ধারিত। আর আগামী দুইদিন (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বৃহস্পতিবার ছিল বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর শেষ কর্মদিবস।
এ উপলক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই আয়োজনে যুক্ত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানান।
বিদায়ী বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, “সবাইকে আহ্বান জানাই, আসুন একটি সুস্থ-সরল-স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক বিচার বিভাগের অবকাঠামো আমরা রচনা করে যাই। আজ আমার বিচারিক জীবনের ইতি টানছি। এই মূর্হতে একটি দাবি রেখে যেতে চাই যে, বিচারপ্রার্থীদের এই স্বর্গীয় আশ্রয়স্থল বিচারালয় কোনো অবস্থাতেই যেন বাণিজ্যালয় হিসেবে যাতে পরিণত না হয়। এটা বার ও বেঞ্চ উভয়কে শক্তভাবে রুখতে হবে।”
তিনি বলেন, “৪১ বছরের এই দীর্ঘ বিচারিক জীবনে কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি তার বিচারের ভার আপনাদের উপর ন্যস্ত। শেষ সময়ে বলে যেতে চাই- আইনের শাসন ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা চলছে তার সফল অংশিদার হবে এই বিচার বিভাগ।”
বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ২৯ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এলএলবি পাস করে ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
১৯৮০ সালে তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুন্সেফ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।
এরপর ২০০৯ সালে তিনি হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১১ সালে হাই কোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হন।
২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি করা হয় আবু বকর সিদ্দিকীকে।
তার ছোট ভাই বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও আপিল বিভাগের বিচারপতি।