শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৯ অপরাহ্ন

পাঁচ বছর পর রাস্তা পেলেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১২৫ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০২ পূর্বাহ্ন

পাঁচ বছর পর চলাচলের রাস্তা পেয়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পাকুড়িয়া এক ও দুই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৩শ’ মানুষ। বর্তমান অবস্থায় এখানে এখনও নতুন করে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হবে অসহায়-দরিদ্র-ভূমিহীণদের অন্তত ১শ’টি পরিবারকে। রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে অসহায়দের বসবাসের আগ্রহও বেড়েছে, যা ক’দিন আগেও পর্যাপ্ত ছিলো না। সম্পন্ন হয়েছে আশ্রয় প্রাপ্তদের মধ্যে বাকি থাকা ‘প্রাপ্তী স্বীকারোক্তিমূলক’ কবুলিয়ত দলীলের কাজ।

২০১৭ সালে অনেকটাই অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি হওয়া এই প্রকল্পটিতে বসবাসরত মানুষদের চলাচলে দুর্দশার অতীত-বর্তমান ও আগামীর সম্ভাবনা তুলে ধরে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশের পর সুরাহার জন্য তৎপর হোন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা, ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রকল্পটি সম্পর্কে বর্তমান ও প্রতিষ্ঠাকালীন সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে তথ্যগত জটিলতার কথা। যদিও এর আগেও বেশ কয়েকবার রাস্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তৎপরতা তেমন একটা কাজে আসেনি। আলোর মুখ দেখেনি অসহায়দের চলাচলের পথ। বর্তমানে মূল পিচঢালা রাস্তার সাথে সংযুক্ত ইটের তৈরি এক মাইলের মতো রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় ভীষণ খুশি আশ্রয়ণের বাসিন্দারা এবং সীমান্তবর্তী জামালপুর এলাকাবাসী।

ফসল ক্ষেতের মাঝখানে গড়ে ওঠা প্রকল্পে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় হারিয়ে যেতে বসেছিলো বসবাসের পরিবেশ। হুমকিতে পড়েছিলো বসবাসরতদের দৈনন্দিন অর্থনীতি। দারিদ্রতার যাঁতাকলে আটকে থাকা মানুষদের আশ্রয়স্থল মিললেও পথের অভাবে হতাশায় পড়েছিলেন তারা। বসবাসরতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবশেষে পথের কাজ শুরু হওয়ায় সন্তুষ্ট তারা, অনেকেই নতুন করে দেখতে শুরু করেছেন নানা উন্নয়ন কল্পনা বাস্তবায়নের স্বপ্ন। কেবলমাত্র আশ্রয়ণই নয় পথটির সুফল পাবেন দৌলতপুরের জামালপুর গ্রামবাসী। কৃষি আবাদী জমির ফসল আনা-নেয়া, আশ্রয়ণের উন্মুক্ত বিশাল খেলার মাঠ এবং পরিকল্পনায় থাকা মসজিদ ব্যাবহারের পাশাপাশি নানা সুবিধার বাস্তবায়ন এখন এলাকাবাসীর চোখের সামনে। যেসব আশ্রয় প্রাপ্তরা সেখানে থাকতে নারাজ ছিলেন তাদের মধ্যে এখন আগ্রহ জেগেছে।

স্থানীয়দের এবং সরকারের জমি মিলে এগিয়ে চলছে রাস্তাটির কাজ, যা শেষ হবে শিগগিরই। প্রতিবেদকদের তুলে আনা তথ্য অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজে বেশ সহায়ক হয় জানিয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা রাস্তাটা করতে পারছি’।

এই প্রকল্পে আরও ঘর নির্মাণের সম্ভাবনা জানিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আ:কা:ম: সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ । এমপি বাদশাহ্ বলেন, ‘রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে প্রথমে ইটের রাস্তা তৈরি করা হবে যা পর্যায়ক্রমে পিচ ঢালা হবে।’ এই সংসদ সদস্য ২০১৯-এ সংসদীয় আসন গ্রহনের আগে ওই প্রকল্পটি শুরু করা হয়, যা নিয়ে পরে বিপাকে পড়েন আশ্রয় গ্রহনকারীরা, প্রকল্পটির সফলতা ফেরাতে রীতিমতো পেরেশান হতে হয় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে পরবর্তীতে দায়িত্বে আসা জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মীদের।

সবশেষ চলতি বছরের জুলাইয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফের উদ্যোগ নেয়া হয় পথের সমাধানে। জানা গেছে, প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল, দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন, সংশ্লিষ্ট আসন কুষ্টিয়া-১ এর সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এবং প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহীন খসরু, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান পথটি বাস্তবায়নে বেশ শ্রম এবং সময় দিয়েছেন। পাশাপাশি, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। এসবের ফলশ্রুতিতেই অবশেষে সঠিক বাস্তবায়নের মুখ দেখতে যাচ্ছে পাকুড়িয়া- এক ও দুই আশ্রয়ণ প্রকল্প।

এসিল্যান্ড আফরোজ শাহীন খসরু জানান, আশ্রয়ণটির মানুষদের জন্য কেবল একটা পায়ে হাঁটা পথ ছিলো, মাঠ ও লোকালয় হয়ে তারা চলাফেরা করতো। বিষয়টি নজরে আসার পর প্রথমে যেই দিক দিয়ে রাস্তা করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়, সেই দিকটা ব্যবহারে জমি ব্যবস্থাপণাসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। পরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তৎকালীন ও বর্তমান কর্মীদের সহযোগিতায় আরেকটি রুট খুঁজে বের করি আমরা। যেখানে, কিছু সাধারণ মানুষের জমির পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তিতে পাওয়া জমি যোগ করে রাস্তাটি নিশ্চিত করা গেছে, এসব জমি এখনও বাংলাদেশী ভূমি জরিপে ওঠেনি।

আরও জানা গেছে, এই পথটি ফসলের মাঠে স্থানীয়দের আসা-যাওয়ার প্রয়োজনে অন্তত ৫০ বছর আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। সম্প্রতি এসিল্যান্ড খসরু ও তাঁর দপ্তরের অংশগ্রহণে রাস্তা সংকুলানের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা হয়। স্থানীয়দের সাথে সমন্বয় করে রাস্তাটি নিশ্চিত করা হয়। আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দাদের মধ্যে যাদের কবুলিয়ত দলীল ছিলোনা সেগুলোও সম্পন্ন করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর