শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

নেপথ্যেই গড়ে উঠেছে দৌলতপুরে বিভিন্ন স্বশস্ত্র বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩১২ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:১৮ অপরাহ্ন

একেকটি দল পঁচিশ থেকে ত্রিশজনের। আগ্নেয়াস্ত্র বা দেশী-বিদেশী পিস্তল-রাইফেল-রিভলবার কুড়ি’র বেশি। এমন স্বশস্ত্র সক্রিয় দল অন্তত ৭টি শুধুমাত্র উপজেলার চরাঞ্চলেই। বলছি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কথা। এমন দল বা বাহিনী চরাঞ্চল ছাড়াও উপজেলার বাকি এলাকাতেও রয়েছে, তবে তারা বর্তমানে অনেকটাই নিস্ক্রিয়।

অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালীদের ছায়ায় সক্রিয় ৭ বাহিনী গড়ে তুলেছে অপরাধ জগতের এক রমরমা রাজত্ব। বিস্তীর্ণ চরে খাওয়াদাওয়া, বিনোদন, প্রশিক্ষণ, রাত্রিযাপন, মাদক, নারী সবকিছুরই ব্যবস্থা আছে এসব বাহিনীর সদস্যদের জন্য।

উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গোচারণভূমি, সেখানে রাখালের গরুর পাল থেকে অস্ত্রের মুখে গুরু ছিনতাই, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ট্রলারে চাঁদাবাজি, অবৈধ ভাবে বালু ও মাটি কেটে বিক্রির প্রহরা, মাদক চোরাচালানের নিরাপত্তা রক্ষী, এমন বিভিন্ন অপরাধের সাথে নিয়মিত জড়িয়ে থাকে এসব বাহিনী। অনেক সময় দস্যুদের সাথেও দস্যুদের বাঁধে গোলাগুলি, বোমা নিক্ষেপ। তাদের আতঙ্কে মুখ খোলেন না ভুক্তভোগীরা। আবার ভুক্তভোগীরা নিজেও অনেকক্ষেত্রে অপরাধী থাকায় এসব গল্প না বলাই থেকে যায়।

বাহিনীর সদস্যদের অধিকাংশের নামে খুন, মারামারি, ডাকাতি, ধর্ষণ, চুরির মামলা রয়েছে। বিভিন্ন বাহিনীতে দু’একজন করে আছে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়া পান্না বাহিনী, লাল চাঁদ বাহিনী, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, গণবাহিনী ও লাল পতাকা বাহিনীর উত্তরসূরিরাও।

এমন অস্ত্রবাজ, বোমাবাজ, বাহিনীতে জড়িয়ে পড়েছে দৌলতপুর উপজেলার অন্তত দুশো তরুণ-যুবক। সচেতন সমাজে উদ্বেগের কথা হলো– নির্বাচনী মৌসুমে এরা রাজনীতিতে ব্যবহার হলে কি হবে!

এসব বাহিনীর অস্তিত্ব স্বীকার করে চরাঞ্চলের ইউনিয়ন ফিলিপনগরের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু বলেন, তার ইউনিয়নে আগে একসময় এমন বাহিনী থাকলেও এখন নেই। চিলমারীর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি এধরণের সন্ত্রাসী বাহিনীর কথা শুনেছেন কিন্তু দেখেননি। তবে, অস্ত্রসহ বিভিন্ন কালোবাজারি ব্যবসা চলে বলে জানান তিনি। প্রাগপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল বলেন, এলাকার মানুষ এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়, নানা ঘটনায় এলাকাবাসী অতিষ্ট থাকলেও কোন সমাধান আসেনি। একেবারে ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল দাবি করেন, তার ইউনিয়নে এমন কোন বাহিনী নেই। অন্যদিকে মরিচার অস্ত্রবাজি সম্প্রতি খবরের পাতায় মোটা দাগে এসেছে।

প্রকাশিত ছবিটি সনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম তবে তার দাবি, ওই সব অঞ্চলে এমন বাহিনীর কোন হিস্ট্রি তিনি পাননি এবং এখনও নেই।

সংশ্লিষ্ট আসন কুষ্টিয়া-১ এর সংসদ সদস্য আ: কা: ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ বলেন, এ প্রসঙ্গে আমার জানা নেই, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবো, তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) মহসীন আল মুরাদ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিভিন্ন বিশ্বস্ত ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্য দাতারা পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক। জনমনে প্রশ্ন এতগুলো অস্ত্রসহ এই বড়বড় বাহিনী কিভাবে সংগঠিত হলো সবার নজর ফাঁকি দিয়ে! সংগঠক হিসাবে কে বা কারা নেপথ্য পৃষ্ঠপোষকতায়!


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর