নির্বাচন মানেই উৎসব, হামলা কিংবা পাল্টা হামলা, বাকযুদ্ধ আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর দোষ খুঁজতে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু ধরাবাধা এই প্রথা থেকে সরে এসে একসাথে গণসংযোগ করে ভোটারদের মন জয় করে নিয়েছেন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের তিন মেম্বার পদপ্রার্থী। সম্প্রীতির এই বিরল দৃষ্টান্ত গড়লেন কুষ্টিয়ার খোকসার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তিন প্রার্থী।
তারা হলেন- বর্তমান মেম্বার মো. আবুল কাশেম, সাবেক সফল মেম্বার ইব্রাহিম উদ্দিন খান কাদেরের ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম সাচ্চু এবং স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মো. আব্দুল আজিজ। ২২ ও ২৩ নভেম্বর তাদের নির্বাচনি এলাকায় একসাথে প্রচারণা চালান তারা।
জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর পরই সরব হয় প্রার্থী ও ভোটাররা। এক প্রকার নির্বাচন উৎসব বিরাজ করছে সবার মনেই। অন্যান্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের মতোই গণসংযোগ চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
সেই ধারাবাহিকতায় খোকসার আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ মেম্বার প্রার্থীও বসে নেই। শুরু করে দিয়েছেন গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা। তবে আলাদা আলাদা নয়- প্রচারণা করছেন সবাই একসাথে! প্রচারণায় সম্প্রীতির এমন দৃষ্টান্ত ভোটারদের মন কেড়েছে। অনেকেই এই তিনপ্রার্থীর প্রচারণাও করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ইয়াসির আরাফাত নামের একজন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনপ্রার্থীর সমন্বিত গণসংযোগের ছবি পোস্ট করে তাতে লিখেন- কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩ প্রার্থী একসঙ্গে গণসংযোগ চালিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। শুভকামনা সবার জন্য।
শুধু ইয়াসির আরাফাতই নয়- এমন শুভকামনা জানাচ্ছেন তরুণদের অনেকেই। মন কেড়েছে ভোটারদেরও।
জয়ন্তীহাজরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেন দুলাল বলেন, এলাকায় যদি আমরা শান্তিতে থাকতে মানবিক বোধ সম্পন্ন, নৈতিক উন্নয়নমূলক কাজ, শিক্ষা শান্তি প্রগতির উন্মেষ ঘটানো জরুরি। অবহেলিত জনপদের মানুষগুলোকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা তৈরি করার বিশেষ দরকার। সবার জন্য শুভকামনা সাথে দোয়া, স্নেহ ও ভালোবাসা।
প্রচারণার ব্যাপারে বর্তমান মেম্বার মো. আবুল কাশেম কুষ্টিয়ার সময়কে বলেন, ভোট আমাদের পবিত্র আমানত। আর আমরা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জনগণের স্বার্থ আদায়ে নির্বাচন করছি। আমরা চাই যেই নির্বাচিত হোক- সম্মিলিতভাবে আমরা মানুষের সেবা করে যাব।
দীর্ঘদিন এই ওয়ার্ডটিতে মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইব্রাহিম উদ্দিন খান কাদের। তারই ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম সাচ্চু এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত। আপদ-বিপদে ছুটে যান মানুষের দ্বারে। পিতার দেখানো আদর্শকে ধারণ করেই মানুষের সেবা করে যেতে চান তিনি।
কুষ্টিয়ার সময়কে সাচ্চু বলেন, ভোটাররা যাকেই যোগ্য মনে করবেন তাকেই ভোট দিবেন। আমাদের প্রচারণার ট্যাগলাইনও এটা। আমরা এটা বলেই ভোট চাচ্ছি। তবে কারো নিজের জন্য নয়। জাজমেন্টটা ভোটারদের করতেই অনুরোধ জানিয়েছি। তবে নির্বাচিত যেই হোক না কেনো তার সাথে এভাবেই একসাথে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করে যাব।
আরেক প্রার্থী মো. আব্দুল আজিজ পেশায় পল্লী চিকিৎসক। সেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ঘটাতে চান তিনি। কুষ্টিয়ার সময়কে বলেন, আমি মানুষের সেবা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আরো বড় পরিসরে মানুষের সেবা করার জন্য ভোটে দাঁড়িয়েছি।
এলাকাবাসীরা তিনপ্রার্থীর এমন দৃষ্টান্তে বেশ উচ্ছস্বিত। ভোটাররা বলেন, এলাকায় তিনজনেরই স্বচ্ছ ইমেজ। তাদের মধ্যে যে কেউ নির্বাচিত হলে এলাকার পরিবেশ ভালো থাকবে। তবে কাকে রেখে কাকে ভোট দেবেন- এটা নিয়ে বেশ ভোগাবে তাদের। এটা নিশ্চিত।
তবে, প্রার্থীদের এমন সংস্কৃতি সবার মধ্যেই দেখতে চান ভোটাররা। তাহলেই সংঘাত আর দ্বন্দ্ব থাকবে না- হবে এলাকার উন্নয়ন। মানুষ কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে পাবেন তাদের অধিকার।