কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আকুতি করেও কোন ফল হয়নি।
অবশেষে তারা দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অসহায় এসকল মানুষ টাকা না পেয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অথচ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এর দায় নিতে চাননি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২০/২০২১ অর্থবছরে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নতুন করে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ও দলিত হরিজন ভাতা প্রাপ্ত হিসাবে নিবন্ধিত হন। এজন্য চলতি জুন মাসে তাদের মোবাইল ব্যাংকে সরাসরি টাকা প্রেরণের জন্য এম,আই,এস সম্পন্ন হয়। কিন্তু অদ্যবধি তাদের দেয়া মোবাইল নাম্বরে কোন টাকা আসেনি। এ ব্যাপারে তারা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিলে জানতে পারেন যে অন্য নাম্বারে টাকা চলে গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন ভাতাভোগীদের এম,আই,এস সম্পন্ন করেছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার তরিকুল ইসলাম,এবং তদারকিতে ছিলেন সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজ।
ভাতাভোগীরা জানিয়েছে সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার তরিকুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীরা আমাদের মোবাইল নাম্বার আপলোড না করে তাদের নিয়ন্ত্রিত মোবাইল নাম্বার আপলোড করে সমুদয় টাকা তারা তুলে নিয়েছেন। ফলে, তাদের মোবাইলে কোন টাকা আসেনি।
পিয়ারপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের ভাতাভোগী ইয়ার আলী জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও মাঠকর্মী কাছে খোঁজ নিতে গেলে তারা জানিয়েছেন মোবাইল নাম্বার ভুল হয়েছে। এরপর থেকে আপনারা টাকা পাবেন। কিন্তু গত ছয় মাসের টাকা তারা পাবেন কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেন নি।
হোগলবাড়িয়া ইউপির চরদিয়াড় গ্রামের ভাতাভোগী ৮০ বছরের বৃদ্ধ হোসেন মন্ডল বলেন, গত ২২ আগষ্ট তারা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিতে গেলে তাদের সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়।
পিয়ারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ লালু জানান, সমাজসেবা অফিস একাজে জড়িত। এছাড়া হোগলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী, আড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইদ আনসারি, আদাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন, প্রাগপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল একইভাবে সমাজসেবা কর্মকর্তা তার অফিসের মাঠকর্মীদের অভিযুক্ত করেন।
সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তিনি শুধু এমপি সাহেবের প্রতিনিধি হিসাবে ভাতােেভাগীদের সহায়তা করে থাকেন মাত্র। তবে, সমাজসেবা কর্মকর্তা একটা দুর্নীতিবাজ লোক বলে তিনি জানান।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পুর্ণরুপে অস্বীকার করেন। উল্লেখ্য এই সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান ২০১৯/২০২০ অর্থবছরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ উঠে এবং সে সময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে তা প্রকাশিত হয়।
এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক রোকসানা পারভীন জানান, আমরা সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরগুলো থানা পুলিশ ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা নগদ এ পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কি প্রতিবেদন আসে তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।