ফাইল: ছবি
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতায় প্রাণিসম্পদ খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, পশু-পাখির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সর্বপরি খামারিদের ভাগ্যোন্নয়ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ২০২৩ সালে এলডিডিপি ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়।
বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল খামারিদের ভাগ্যোন্নয় করা। কিন্তু প্রকল্পের টাকা যেভাবে ভাগ-বাঁটোয়ারা বা বন্টন করা হয়েছে, তাতে প্রকৃত খামারিদের ভাগ্যোন্নয়ন না হলেও এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও তাঁদের কমিশন দিয়ে সুবিধা নেওয়া কিছু মানুষের পকেট ভারী হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৃত খামারিরা এই প্রকল্পের কোনো সুফল পাচ্ছেন না। অনেক প্রতারক খামারি সেজে প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন বা নিয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতা করছেন প্রকল্পের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। বিনিময়ে তাঁরা পেয়েছেন টাকার ভাগ।
তেমনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে ‘আলভি এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ভুয়া ডেইরি ফার্ম দেখিয়ে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত করণের একটি কারখানা বা খামার করার কথা বলে ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে।
অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে ওই প্রতিষ্ঠানটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বালিরদিয়াড় গ্রামে মিলন হোসেনের বাড়িতে থাকার কথা। তবে সরকারের টাকায় কেনা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত করণের মেশিন মিলনের বাড়িতে পাওয়া যায়নি বা কেনা হয়নি তা মিলন নিজেই জানিয়েছেন।
অনুদানের শর্ত ছিল খামারিদের ম্যাচিং গ্র্যান্টের টাকা ও নিজস্ব অর্থায়নে মিষ্টি তৈরির মেশিন, দই ইনকিউবেটর, মিক্সচার মেশিন, দুধ ঠান্ডাকরণ যন্ত্র, প্যাকিং মেশিন, লাবাং মেশিন, পাস্তুরাইজার মেশিন ও এসএস চুলা কিনতে দেওয়া হয় এই অর্থ সহায়তা।
সরোজমিনে আলভি এন্টারপ্রাইজ নামের ওই কারখানাটির খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মালিক মিলন হোসেন ঠিকাদারি ব্যবসা করেন তার কোন আধুনিক ডেইরি ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান নাই। তিনি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দৌলতপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্র খুব আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার পরিচয়ে প্রকল্পের এ অর্থ পেয়েছেন। মিলন হোসেন দৌলতপুরে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বালিরদিয়ার গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী প্রামাণিকের ছেলে।
মিলনের কাছে তার আলভি এন্টারপ্রাইজ নামের ডেইরি ফার্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার এই প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার চৌদ্দ গ্রামে রয়েছে। দৌলতপুরের ঠিকানায় নেওয়া প্রতিষ্ঠান কি ভাবে কুমিল্লার চৌদ্দ গ্রামে চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে তেমন দই বা মিষ্টির চাহিদা নাই তাই আমি ওখানেই করেছি। তবে এ বিষয়ে আমি অধিদপ্তরকে অবগত করেছি বলে উল্লেখ করেন।
তবে কুমিল্লার চৌদ্দ গ্রামেও তার কোন প্রতিষ্ঠান না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলে মিলন হোসেন পরে দাবি করেন তার কারখানা চট্রগ্রামে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছেন, তিনি ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে সরকারের সহায়তা করা টাকার মালামাল ক্রয় করে তা বিক্রি করে দিয়েছেন অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে যা তিনি নিজের বলে দাবি করে আসছেন।
প্রকল্পের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মিলনের বাড়িতে সকল কার্যক্রম দেখে এসেছিলাম। এর পরে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হলে তাকে সরকারের সহায়তা করা হয়, তবে তাকে টাকা দেওয়ার সময় আমাকে জানানো হয়নি। অবশ্য পরে তা জানতে পেরেছি।
এসময় তিনি তথ্য চাওয়া ওইসব গণমাধ্যম কর্মীদের আরো বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি লোক পাঠিয়েছিলাম মিলনের সেই কারখানায়। সেখানে সরকারের অর্থ সহায়তায় কেনা কোন মেশিন পাওয়া যায়নি। মিলন জানিয়েছেন এখানে ব্যবসা ভালো না হওয়ায় আমি ঢাকায় যোগাযোগ করে কুমিল্লার চৌদ্দ গ্রামে নিয়ে গেছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম বলেন, দৌলতপুরের জন্য নেওয়া প্রকল্প তা অন্য কোথাও ব্যবহার করা আইন বহির্ভূত। প্রজ্ঞাপন দেখে বলতে পারবো এটা অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে কিনা। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হবে মিলনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সরকারের দেওয়া প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
০১৭৩২৯৬৫৮৫৬