শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ অপরাহ্ন

দৌলতপুরে তরুণ রনি হত্যা না-কি আত্মহত্যা!

কুষ্টিয়ার সময় প্রতিবেদক / ২২০ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:৪৯ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ায় শিল্পকারখানা থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ দাফন হলেও মৃত্যু ঘিরে গুঞ্জন কাটেনি এখনও। তরুণ শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর দায় পড়েছে তার নিজের ওপর। জোর গুঞ্জন উঠেছে তরুণের মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত নয়।

গেলো ২৮ আগস্ট অন্যান্য দিনগুলোর মতোই কারখানায় কাজে যান কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের গাড়ি চালক আহাদের ছেলে রনি। ও-ই দিন দুপুরে রনির কাজ শেষে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছে গভীর নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে লাশ হয়ে।

দৌলতপুরের আল্লারদর্গা কলেজ পাড়া এলাকায় একসময়ের স্বনামধন্য দিয়াশলাই তৈরি কারখানার প্রধান ফটকে এখনও আগের মতোই লেখা আছে নুরুজ্জামান বিশ্বাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তবে এখানে আর দিয়াশলাই উৎপাদন হয়না। এখন কি হয় তাও পরিষ্কার নয় স্থানীয়দের কাছে, জানা গেছে এখানে এখন সম্পূর্ণ কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ-বস্তা তৈরি করা হয়। কারখানাটির বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেন অন্তত তিন হাজার নারীপুরুষ। কারখানার যন্ত্রপাতি ও গাড়িঘোড়া মেরামতের ওয়ার্কশপে কাজ করতেন ২৮ বছর বয়সী রনি। বুধবার দুপুরে নিজের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় কারখানার নিয়মানুযায়ী গেইটে নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়মিত তল্লাশি করাতে নিরাপত্তা চৌকিতে আসে রনি। বিকাল ৪ টা পর্যন্ত এটুকুই জানতেন রনির সহকর্মীরা।

কারখানা পরিচালনা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুসারে, নিরাপত্তা চৌকিতে রনির কাছে ওয়ার্কশপের কিছু ছোট যন্ত্র পাওয়া যায়। এসময় তাকে চুরির দায় দিয়ে বিচারের জন্য আটকে রাখলে কারখানার মূল ফটকের পাশের কক্ষে নিজের কোমরে থাকা নাইলন কাপড়ের বেল্ট দিয়ে সিলিংয়ের রডে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় ও পরিবারকে খবর দেয়া হয়।

শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র আলোচনা চুরির অপরাধে রনিকে নির্যাতন করা হলে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে সে, এরপরই সাজানো হয় আত্মহত্যা নাটক। দুপুরে মৃত্যু হলেও বিকাল পর্যন্ত এঘটনা গোপন করে কারখানা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা। মরদেহ হাসপাতালে নেয়ার পর পরিবারকে খবর দেয়া হয় রনি আত্মহত্যা করেছে জানিয়ে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও অনিরাপদ শ্রমজীবনের ক্ষোভে কারখানার সামনে সেই বিকেলেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন স্থানীয় জনতা।

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, রনিকে জরুরি বিভাগেই মৃত সনাক্ত করা হয়। হাসপাতালে আসার অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ শ্বাসরোধ।

দৌলতপুর থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ আসলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ উঠেছে, আত্মহত্যার কথা বলা হলেও কোনো আলামত রাখেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।

নিহত রনির সহোদর রকি বলেন, ভাই কিভাবে মরেছে আল্লাহ জানেন। আমরা আমার ভাইয়ের লাশ হাসপাতাল থেকে এনে দাফন সম্পন্ন করেছি। মৃত্যুর পর কারখানা কর্তৃপক্ষ অনুদান হিসাবে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছে।

নুরুজ্জামান বিশ্বাস ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার মঈনুল ইসলাম প্রতিবেদকের সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলার সময় শ্রমিক রনির মৃত্যু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জানান, পরে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে এরপর আর তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

নুরুজ্জামান বিশ্বাস ইন্ডাস্ট্রিজের সাইনবোর্ডে চলা এই ব্যাগ-বস্তা তৈরি কারখানা ও সংলগ্ন ইটের কারখানায় শিশুশ্রম, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ, মজুরি বৈষম্য এবং শ্রমিক নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এর আগে এই প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে শিল্পের নামে আইনবহির্ভূত কৃষি জমির মালিকানারও সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর