কুষ্টিয়ায় জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশের সাথে স্থানীয়দের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। ডিবি’র এসআই আলহাজ আলী সাক্ষরিত একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে দৌলতপুর থানায় মামলাও হয়েছে। এদিন পৃথক দুই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৪ জন। তবে, উঠেছে নানা প্রশ্ন, চলছে ব্যপক গুঞ্জনও।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, রোববার ৯ জুন রাতে ডিবির একটি দল আসে উপজেলার হোগলাবাড়িয়া ইউনিয়নের চরদিয়াড় গ্রামে। এসময় স্থানীয় তাছেরের দরবার নামে পরিচিত পরিত্যক্ত এলাকায় রাতে সাদা পোশাকে ডিবির লোকদের দেখে সন্ত্রাসী বা মাদক পাচারকারী ভাবে এলাকাবাসী। স্থানীয় বিভিন্ন বাড়ি থেকে খেয়ালও করা হচ্ছিলো তাদের, ঘটনাস্থলের পথ দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে যাচ্ছিলো সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের ভাতিজা প্রয়াত রবিউল হক চৌধুরীর ছেলে ছাত্রনেতা পার্শ্ববর্তী নিকটতম পাড়ার তুষন চৌধুরী। পুলিশ তাকে থামিয়েই আকস্মিক আক্রমণাত্মক ও মারমুখী হয়ে ওঠে। তাদের সন্ত্রাসী বা ছিনতাইকারী ভেবে দৌড়ে পালিয়ে লোকালয়ে ঢোকার চেষ্টা করে তুষন চৌধুরী। তাকে ধরে ফেলে ডিবি সদস্যরা উভয়পক্ষের পরিচিতি ছাড়াই বেধড়ক পেটাতে থাকে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও পথ চলতি মানুষেরা তুষন চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক হামলা ভেবে প্রতিহত করার চেষ্টা করে ডিবি পুলিশদের। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ডিবি পরিচয় পাওয়া গেলে ঘটনা থেমে যায় সেখানেই। আহতাবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছে উভয় পক্ষেরই কয়েকজন করে। তুষন চৌধুরীর ওপর হামলা হয়ে আহত হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা এসে ডিবি সদস্যদের সনাক্ত করেন, ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষের আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাদের আসতে দেখে উত্তেজিত জনতা ফিরে যায়।
বাদী আলহাজ আলীর দেয়া এজাহারে উল্লেখ করা এমন কয়েকজনের খোঁজ পাওয়া গেছে যাদের দাবি তারা ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন না, এবং অনেক পরে ডিবি পুলিশের হামলা ও জনগণের সাথে মারামারির কথা শুনেছেন। এমন আসামিও পাওয়া গেছে, যে কি-না ঘটনার পুরো সময় ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ছিলো অন্য একটি সিসি টিভি আওতাভুক্ত এলাকায়। ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করা হলেও ৩ জনের কোনো ভূমিকাই উল্লেখ নেই অভিযোগে। এছাড়াও আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে।
এদিকে মামলার বাদী এসআই আলহাজ আলী বলেন, এবিষয়ে উর্ধতন স্যাররা কথা বলতে পারবে। আমি কথা বলতে পারবো না। তবে, তার পরামর্শ মতো উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে প্রতিবেদন লেখার সময় ফোন কল না ধরায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এর আগে কুষ্টিয়া ডিবি’র ওসি মাহফুজুল হক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দৌলতপুরে ওইদিন একই এলাকায় দুটি ভিন্ন মামলা দায়ের হয়েছে, একটি মাদক উদ্ধারের আরেকটি হামলার।
দৌলতপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান মিনে জানান, ডিবি সদস্যদের যারা মেরেছে তারা পালিয়ে গেছিলো, তাৎক্ষণিক যাদের সম্ভব হয়েছে আটক করা হয়েছে, আটকদের বাড়ি ঘটনাস্থলের আশপাশেই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকের সাথে কথা বললে তারা দাবি করেন, দৌলতপুরে একাধারে বর্তমান এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য জনগণ নির্বাচিত বিজয়ী থাকায় চৌধুরী পরিবারের সাথে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও জনপ্রিয়তায় পেরে না উঠে কিছু লোক দৌলতপুরে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে, তারা ডিবি পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। উষ্কে দিচ্ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সক্রিয় এবং ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীদের স্পর্শকাতর মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলেও মন্তব্য জানান তারা।
ডিবি’র ওই টিমে থাকা সদস্যদের মধ্যে বুলবুল নামে এক সদস্যের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও খারাপ আচরণের সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই ধরনের কাজে ওই দলে আরও ২-১ জন এলাকাবাসীর পরিচিত হলেও তাদের নাম বলতে পারেননি তারা। তাছেরের পরিত্যক্ত আস্তানায় ডিবির লোকেরা বিভিন্ন সময় আসামি ধরে এনে আলোচনায় বসে বলেও জানা গেছে।
আরেকদিকে, মঙ্গলবার মাঝরাতে উপজেলার কল্যাণপুর ও চরদিয়াড় এলাকায় অন্তত ৩০ বাড়িতে ডিবি পুলিশ ভাঙচুর ও মারধর চালিয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন ভুক্তভোগীও পাওয়া গেছে, যে পরিবারের সদস্য দু’জন একজন ৫৫ বছরের বৃদ্ধা আরেকজন ৭০ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ। এমন পরিবারও পাওয়া গেছে ডিবির করা মামলায় ওই বাড়ির আসামি আটক, কারাগারে, কিন্তু বাড়িতে তল্লাশী ও ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে নারী শিশুদের সাথেও খারাপ আচরণের ও মারধরের। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাড়িতে বাড়িতে ভাঙচুরের চিত্র। চরদিয়াড় এলাকার আফতাব জানান, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। একই এলাকার গৃহিণী মুক্তা বলেন, যার বাড়িতে যা নগদ টাকা সোনার গয়না পেয়েছে তা-ও নিয়ে গেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে ওসি ডিবি বলেন, ডিবির টিম আসামি ধরতে গেছে, এলাকাবাসী যে অভিযোগ করছে, ডিবির টিম এসব করার প্রশ্নই আসে না।