আইনের শাসনের পরিবর্তে মাদকসম্রাটদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলছে বিলগাতুয়া গ্রাম। মাদকচোরাচালানচক্রের আন্তঃকোন্দলের বলি হচ্ছে শান্তিপ্রিয় জনগণ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মোস্টওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত মাদকসম্রাটদের মটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি ও হর্ণে শব্দ দূষণ হলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলছেননা। সাম্প্রতিককালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বিলগাতুয়া গ্রামে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে এতে আতংক বেড়েই চলেছে বিলগাতুয়া সিমান্তে।
বিশেষ সূত্রের তথ্যমতে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর লাল সবুজের মানচিত্রে মাদকদ্রব্য প্রবেশের একমাত্র রুট বিলগাতুয়া। এই রুট নিয়ন্ত্রণ করেন ডজনখানেক মামলার আসামী মাদকসম্রাট সেন্টু ও টুয়েল ।
সর্বশেষ গত কয়েক মাসে যুক্ত হয়েছে দৌলতপুর জিআর কয়েক ডজন মামলা। এই মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বর্তমান সেন্টু ও টুয়েল সহ তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা পলাতক রয়েছে । তাছাড়া তাদের নামে ডজনখানেক মামলাও বিচারাধীন রয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার জামালপুর,ঠোটারপাড়া,পাকুড়িয়া,মরারচর,ধর্মদহসহ ২৬ টি গোল্ডেন ভিলেজের মাদকসম্রাটরা সেন্টু ও টুয়েল কে চাঁদা দেয় নিয়মিত। আর এসব টাকা চাঁদার টাকা উত্তালন করে তাদের দেহরক্ষী জুয়েল ও সান্টু। আর এই টাকার কমিশন চলে যায় এলাকায় বসবাসরত প্রভাবশালীদের পকেটে।
এদিকে এলাকাবাসী বলেন, দৌলতপুর সিমান্তে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় এমন একটি গ্রুপের চিহ্নিত কিছু মুখোশধারী সদস্যরা গত ২৩ অক্টোবর রাত ২ টার সময় একই এলাকার তোয়াজ আলীর ছেলে আকিদুলের গরুর ফার্মে অনাঅধিকার প্রবেশ করে আকিদুলের উপর হামলা চালিয়ে পায়ের রগ কেটে দেওয়া সহ মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মেরে মর্মান্তিক ভাবে জখম করে। পরে ওই রাতেই গ্রামবাসী আকিদুল কে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা শহর রাজশাহীতে পাঠাই । এবং ওই সময় চিহ্নিত ঐ সন্ত্রাসীরা আকিদুল এর ফার্মের ৭ টি গরু লুট করে নিয়ে যায় ।
এ ঘটনায় হামলার শিকার হওয়া আকিদুলের জবানবন্দি অনুযায়ী, সেন্টু, আসলাম, টুয়েল ও ইসমাইল বিশ্বাস সহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে মিলিয়ারা খাতুন দৌলতপুর থানায় উপস্থিত হয়ে বিস্ফোরক, হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও লুটের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন যার নং ৪০।
লুটে যাওয়া ৭ টি গরুর মধ্যে ৬ টি জামালপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ ও প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল সরকার, ও একটি গরু খুঁজে পাওয়া যায় মাঠের ভিতরে ।
এ রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত (২৮ অক্টোবর রাত ১১ টা) পর্যন্ত এই ঘটনার সাথে জড়িত ১ জন বাদে আর এমন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি দৌলতপুর থানা পুলিশ।
কিন্তু উধোর বোঝা বুধোর ঘাড়ে। প্রাগপুর কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও বিলগাতুয়া গ্রামের মরজেম মালিথার ছেলে নাঈম কে এই ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন দাবি করে নাঈম এর উপর হামলা হয়েছে যে হামলায় রাজশাহী হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকা আকিদুলও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে মর্মে দৌলতপুর থানায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করে
নাঈমের মা।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো নাঈম নিজেই জানেনা তার উপর ২৩ জন সহ আরো ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা লোক হামলা করেছে।
এদিকে গত ৩ অক্টোবর-২০২২ রাতে বিজিবি’র একটি চৌকস অভিযানিক দল ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও ১ টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেন। ৪৭ বিজিবি ব্যাটলিয়নের বিলগাতুয়া বিওপি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আব্দুর রহমানের ভাষ্যমতে বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় বিলগাতুয়ায় বিজিবির অভিযানে আরো ১টি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার হয়।
এই অস্ত্রগুলো কার,কি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের মনে। অস্ত্র উদ্ধার হলেও কোন আসামী গ্রেফতার হচ্ছেনা। কিন্তু কেন? মাদকব্যবসায়ীদের ক্রাসের রাজ্যে কেউ ভয়ে মুখ খুলেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান,আধিপত্য বিস্তার,নির্বিঘ্নে মাদক চোরাচালান নিশ্চিত করতে বিলগাতুয়া গ্রামের ইন্তাজ বাঙ্গালের ছেলে আবু বক্করকে বোমা তৈরীর সরঞ্জাম দিয়ে রীতিমতো কারখানা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন ওই এলাকার উপরিক্ত বর্ণিত চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা যেটা আবুবক্করের মা নিজেই এলাকার সকলকে জানিয়ে ছিলেন ।
এবং গত বছরের ১৯ আগস্ট বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরন ঘটলে আবু বক্কর মারাত্মকভাবে আহত হন। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন।
ওদিকে একই গ্রামের আকবর বিশ্বাসের ছেলে ও ইসমাইল বিশ্বাসের নাতী ছেলে লিটন বিশ্বাস অবৈধভাবে ভারত সীমান্ত থেকে মাদক দ্রব্য আনতে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। চারদিন পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বিজিবি মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লিটন বিশ্বাসের লাশ ফেরত পায় তার পরিবার।
সম্প্রতি ঐ গ্রামের তোয়াজ আলীর ছেলে আকিদুল মাদক ব্যবসা থেকে সরে আসার পরে তার উপর একই এলাকার ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে যে নিঃসংস হামলা হয়েছে তাতে করে
আরো আতংক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা ব্যাপি।
এমন অবস্থায় বিলগাতুয়া সিমান্তে মাদক মাদক চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের স্মারকলিপি দিয়েছে বিলগাতুয়া গ্রামের সাধারণ জনগণ। তবুও কোন সুরাহা হচ্ছেনা। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বললেই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। বিলগাতুয়া ক্রাইমজোনে মাফিয়াচক্রের জুলুম বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেছেন শান্তিপ্রিয় জনতা।