মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এখনও এই ফল মেনে নিয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি ট্রাম্পের কাছ থেকে। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত ফল না মানেন তাহলে কী হবে- এখন সেই প্রশ্নই উঠছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট যদি নির্বাচনে পরাজিত হন এবং সেই ফল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে, তাহলে তিনি পরাজয় স্বীকার করলেন কি করলেন না তাতে কিছু এসে-যায় না।
নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করেন জয়ী প্রার্থীকে একটা ফোন করে এবং সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতার মাধ্যমে। নিকট অতীতে হিলারি ক্লিনটন, জন ম্যাককেইন, এ্যাল গোর, জর্জ এইচ বুশ- সবাই তাই করেছেন। তবে এই পরাজয় স্বীকার করা একটা আনুষ্ঠানিকতা বা রাজনৈতিক সৌজন্য মাত্র- এর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।
ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায়। এরপর তিনি আর প্রেসিডেন্ট থাকবেন না।
তিনি বলেন, আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের বর্তমান ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবে এবং সে সময়ই ২০২০-এর নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী শপথ নেবেন এবং শপথ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন।
এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সাধারণত কংগ্রেস ভবনের সামনে হয়ে থাকে, কিন্তু আইনগতভাবে এরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
অধ্যাপক ড. রীয়াজ বলেন, আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিতে পারেন। পরাজিত প্রার্থী নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকেন, যেমন ট্রাম্পের শপথের দিন ছিলেন হিলারি ক্লিনটন।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প ভোটের ফলে হেরে গেলেও হয়তো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে আইনি লড়াই চালানোর চেষ্টা করতে পারেন, তবে সেসব মামলায় তেমন কোনো কাজ হবে না।
তারা বলছেন, ট্রাম্প যাই করুন, আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নতুন প্রেসিডেন্টের হাতেই চলে আসবে।
বাইডেন শপথ নেয়ার পর তিনি চাইলে ট্রাম্পকে তখন হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, জো বাইডেন নিজেই একবার বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত করছেন যে ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর হোয়াইট হাউস ছাড়তে না চাইলে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যাবে। অবশ্য সিক্রেট সার্ভিস ঠিক কী করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তারা এখনই জো বাইডেনকে নিরাপত্তা দিতে শুরু করেছে।
সহসাই পরাজয় মানবেন না ট্রাম্প : রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহসাই পরাজয় মেনে নিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বেশ কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করে আসছেন কোনো প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে হেয় করতে। তিনি শনিবার ফের ঘোষণা দিয়েছেন আইনি কৌশলে অগ্রসর হবেন।
তিনি আশা করছেন, ভোটে বিজয়ী বাইডেনের জয় কিছু রাজ্যে উল্টে দিতে পারবেন আইনি লড়াইয়ে। ট্রাম্পের কিছু সহকর্মী এবং রিপাবলিকান মিত্ররা তার এ কৌশলকে সমর্থন করছেন, আবার আরেকটি অংশ নীরব রয়েছেন। শনিবার দুপুরের দিকে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা টিম ট্রাম্পের একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনের প্রকৃত ঘটনা এখনও অনেক দূরে। জো বাইডেনকে কোনো রাজ্যেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি।
ট্রাম্পের মিত্ররা এবং উপদেষ্টারা প্রাইভেটলি স্বীকার করেছেন নিউইয়র্কের সাবেক ব্যবসায়ী ট্রাম্পের নির্বাচনী ফল উল্টে দেয়া এবং হোয়াইট হাউসে অবিচল থেকে যাওয়া ক্রমশ ক্ষয়ে আসছে। তবে তারা এজন্য আইনি চ্যালেঞ্জের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন।
ট্রাম্পের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, তার উচিত নতুন করে ভোট গণনা করতে দেয়া। মামলায় যে অভিযোগই থাকুক না কেন তাতেও যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে তার উচিত পরাজয় মেনে নেয়া।