কুষ্টিয়ার খোকসার শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সরকারী প্রণোদনায় ছয়নয় করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আ: রাজ্জাক ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আ: বারেকের। অন্যদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ খাঁন।
শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আ: বারেক (৪৫) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, একতারপুর থেকে সুইচ গেট পর্যন্ত ওয়াপদা’র যে খাল রয়েছে সেখান থেকে মাটি খনন করে বিক্রি করার পায়তারা করছিল চেয়ারম্যান। আমরা বাধা দেওয়ায় সে আমার উপর নারাজ হয়। এ রকম অনেক অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করেছে।
অন্যদিকে একই অভিযোগ করে শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আ: রাজ্জাক (৪২) বলেন, ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে দুস্থ্য ও অসহায় মানুষদের জন্য ৪৫০/= টাকার যে সরকারী অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এখানেও চেয়ারম্যান অনিয়মেরে আশ্রয় নিয়েছে।
এ সময় তিনি আরো অভিযোগ করে আ: রাজ্জাক বলেন, আমি আমার ওয়ার্ডের গরীব অসহায় মানুষের তালিকা করে দিয়েছিলাম কিন্ত চেয়ারম্যান সেখান থেকে ১২/১৩ জনকে তালিকায় রেখে সব বাতিল করে দিয়েছে এবং তার নিজস্ব লোকজনকে তালিকাভুক্ত করেছে। যাদের অধিকাংশই স্বচ্ছল ও অর্থ বিত্তের মালিক। এমতাবস্থায় আমি আমার এলাকার দরিদ্র মানুষের অধিকার রক্ষা করতে পারছিনা। এ বিষয়ে নিয়ে আমরা ইউএনও অফিসে লিখিত অভিযোগও করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে লিখিত অভিযোগের উপর ভিত্তি করে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কিছু দরিদ্র পরিবার করোনাকালীন সময়ে সরকারী যে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে তাদের নামও আসেনি তারা পানও নি বলে জানান এই ওয়ার্ডের একাধিক ভুক্তভোগীরা।
শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা পাঁচ সন্তানের জননী বিধবা শ্যামলী রাণী (৬০) বলেন, আমার স্বামী নেই সংসারে উপার্জন করারও তেমন কেউ নেই। আমি অনেক কষ্ট করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখনও এক মেয়ে অবিবাহিত একটা ছেলে পড়লেখা করাতে পারিছি না। এখন অন্যের দোকানে কাজ করে, আমি রাজ্জাক মেম্বরের কাছে আইডি কার্ড দিয়েছিলাম কিন্ত কোন সাহায্য পাইনি। অন্যদিকে একই ওয়ার্ডের মালেকা (৩৫), ইউছুফ (৪০) সহ অনেকেই বলেন, আমরা কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা পাইনি। আমরা কষ্টে আছি, রাজ্জাক মেম্বর কাছে তিন তিন বার আইডি কার্ড দিয়েছি কিন্ত কোন কাজ হয়নি। আবার তাদেরও একই অভিযোগ অনেক স্বচ্ছল মানুষ সাহায্য পাচ্ছে অথচ আমরা পাচ্ছি না।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তালিকা নাম আছে শিক্ষক আরিফুল ইসলাম (৩০) এর তিনিই বলেন, ঢাকা স্ট্যান্ডার্ড পাবলিক স্কুলে শিক্ষকতা করি এবং নিজ বাড়িতে একটি কোচিং সেন্টারও আছে তার। সরকারের বিশেষ প্রণোদনার জন প্রতি ৪৫০/= টাকার নামের তালিকায় রয়েছে তার নাম।
এ বিষয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ খাঁন সাথে কথা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সকল মেম্বারের তালিকা থেকেই নাম নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ গুলো সঠিক নয়। আমি সকল ইউপি সদস্যেদের সাথে মিটিং করেই তালিকা করেছি সেখানে তারাও ছিল। ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ২টা তালিকা করা হয়েছে এর মধ্যে ৫৫৫ জনের তালিকায় ৬৩ জন ও ১০৭৭ জনের মধ্যে ৭৩ জনকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এবং ৯ নং ওয়ার্ডে ৫৫৫ জনের মধ্যে ৭০ জন ও ১০৭৭ জনের মধ্যে ১১৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে ইউনিয়নের স্বচ্ছল মানুষের নাম এই তালিকায় রয়েছে কিন্তু বাদ পড়েছে অনেক দরিদ্র মানুষ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই তালিকাগুলো তৈরী করে মেম্বররা সেখানে তাদের কর্মী বিবেচনা করে তাদের তালিকা দেয় এটা ঐভাবে বিশ্লেষন করা অনেক সময় সম্ভব হয় না।
আদস
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দীন মুঠোফোনে বলেন, শিমুলিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্যের দরখাস্ত আমার অফিসে জমা দিয়েছে। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ওইখানে অনিয়ম ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরো বলেন, সরকারের দরিদ্রদের জন্য বিশেষ এই সহায়তায় কোন অনিয়ম করা সুযোগ নেই। আর যদি অনিয়ম হয় তার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।