শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন

ক‌রোনা, দায়বদ্ধতা আর এক‌টি শূন‌্যতার গল্প…

কুষ্টিয়ার সময় প্রতিবেদক / ২৩২ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১, ৮:২৮ পূর্বাহ্ন

“দিনে একবার ওই দূর থেকে আমাদের দেখা হয়। আমার ১০ মাস বয়সী ছেলেটা, আমি যখনই বাসায় আসতাম চিৎকার দিয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে কাছে চলে আসতো। এক সপ্তাহ হলো, ওর কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি। এই কষ্ট অন্যরকম। আইসোলেশনে একাকীত্বের সাথে পেড়ে ওঠা মুশকিল। শরীর যখন বেশি খারাপ ছিল সারাদিন বিছানায়ই কেটে যেত। এখন কিছুটা ভাল হওয়ায় অখন্ড অবসরে সময় আর কাটতে চায় না। নিজেই নিজের ঘর দোড় পরিষ্কার করি, বইপত্র গুছাই, ঘরের কাজ করি।

জানালায় দাঁড়িয়ে পাখি দেখি, গাছের ডালে বৃষ্টি দেখি। ভাবি জীবনের ব্যস্ততায় কতকিছুই দেখা হয়নি। জীবন হয়তো এভাবেই একদিন ফুরিয়ে যায়, অনেক কিছু ততদিনেও দেখা হয় না। বৃষ্টিতে ভিজে দুটো শালিক জড়সড় হয়ে আশ্রয় নিয়েছে সানসেটের উপরে আমগাছের বড় ডালটার নিচে, আমি তাকিয়ে দেখি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংগ্রাম হচ্ছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম….

হাসপাতালে কাজ করতে করতে ঈদের মধ্যে জ্বর আসে আমার। অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় পরদিন বাড়ি চলে আসি। ডাক্তার হওয়ায় বুঝতে পারি কোভিড আমাকেও ছুঁয়ে ফেললো বোধহয়। রিপোর্টে এরপর পজিটিভ আসে। আমি সন্তর্পণে বাড়িতে ঢুকি, যাতে আমার বাচ্চাটা না বুঝতে পারে। একটু মন খারাপ হয়, কিন্তু মনে মনে ভাবি আমার তো তবুও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগেনি। হাসপাতালে রোগীদের কষ্ট দেখলে নিজের আর কোন কষ্ট থাকে না।

অনেকেই ফোনে, মেসেজে শুভকামনা জানিয়েছেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। ফোনে কথা বলতে এখনো একটু কষ্ট হয়, তাই সবার ফোন ধরতে পারি না। দুজন করোনা আক্রান্ত রোগী, যারা আমাদের হাসপাতালে ভর্তি থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন; তারা কোথা থেকে যেন ফোন নাম্বার যোগাড় করে নিয়মিত খোঁজ নেন। নানান পরামর্শ দেন- স্যার লেবু খাবেন, মাল্টা খাবেন। আমি শুধু বলি, আচ্ছা। মানুষ বোধহয় ভালবাসার জন্যই বাঁচে…”

লেখক : ডা. প্রেমাংশু বিশ্বাস

আবা‌সিক মে‌ডি‌কেল অ‌ফিসার,

খোকসা উপ‌জেলা স্বাস্থ‌্য কম‌প্লেক্স,কুষ্টিয়া ।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর