কুষ্টিয়ায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। বিশেষ করে ঈদের পর থেকে এই সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত জেলায় করোনায় মৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে। এদের মধ্যে সদরেই ৩৫ জন রয়েছেন।
শুক্রবার জেলায় ২০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আক্রান্তের দিক দিয়ে অধিকাংশই কুষ্টিয়া শহরকেন্দ্রিক।
এদিকে শুক্রবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৮টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম করোনা সংক্রমণ রোধে শহরের পৌরসভা এলাকায় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
এতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার (১১ জুন) মধ্যরাত থেকে আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত অধিক সংক্রমিত এলাকা বিবেচনায় পৌরসভা এলাকার সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল, দোকান, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান সকাল ৮টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে।
বিধিনিষেধ চলাকালে পৌরসভা এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকাগ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। সকল পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
জনসমাবেশ হয় এমন সামাজিক (বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শুধুমাত্র জরুরি সরকারি নির্মাণকাজ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলমান থাকবে এবং এ সংক্রান্ত পণ্য পরিবহন বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন- কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), সরকারের রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল দফতর বা সংস্থাসমূহ জরুরি পরিষেবার আওতাভুক্ত হবে এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। পূর্বের ন্যায় শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
জানা যায়, কুষ্টিয়ায় করোনা চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। এতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে নেই কোনো আইসিইউ শয্যা। করোনা ইউনিটে শয্যা মাত্র ৪১টি। নতুন করে আরও একটি ৩৬ শয্যার ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ৬২ জনেরও বেশী রোগী ভর্তি হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রয়েছে ৭০৬টি। এসব সিলিন্ডারের মধ্যে জেলা পর্যায়ে রয়েছে ৩৪৭টি। ৩৫৯টি রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। এছাড়া অক্সিজেন তৈরির ৪২টি কনসেনট্রেটর রয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের ১০ বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।