ঈদকে সামনে রেখে বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে কেনাকাটার ধুম লেগে যায়। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা স্বাদ ও স্বাধ্যের মধ্যে কিনে প্রতিটি সদস্যের নতুন পোশাক। কিন্তু মহামারী করোনায় ঈদের পোশাক কিনতে ধনীদের তেমন অসুবিধা না হলেও বিপাকে পড়েছেন গরিব ও অসহায় স্বল্প আয়ের মানুষ। করোনা মহামারিতে ঠিকমত কাজ ও অর্থ না থাকায় অনিশ্চিত ঈদের নতুন পোশাক কেনা। তাদের কাছে অনেকটায় অনিশ্চিত ঈদের আনন্দ।
সেকারণেই খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী করতে এক ভিন্নরকম দোকানের খোলা হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়। দোকানে শিশু থেকে সব বয়সী মানুষই আসছেন, ঘুরেফিরে পছন্দের ঈদ পোশাক দেখছেন এবং অবশেষে টাকা ছাড়াই পছন্দের পোশাক নিয়ে খুশিতে বাড়ি ফিরছেন।
ঈদকে সামনে এমন ভিন্নরকম দোকান খুলেছেন তরুন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শাকিল আহমেদ তিয়াস। তিনি কুমারখালী ইয়াং কালেকশন, আর এন ফার্নিচার ও রাফা পাঞ্জাবী গার্মেন্টসের স্বত্ত্বাধীকার। এ দোকানটি কুমারখালী গণমোড় সংলগ্ন কৃষি ব্যাংকের নিচে মোবারক মার্কেটে অবস্থিত। আর দোকানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ ঈদ আনন্দ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা’। দোকানে শিশু থেকে সব বয়সী পাঁচশত পুরুষ মানুষের জন্য নতুন জামা, গেঞ্জি, পাঞ্জাবীসহ বিভিন্ন রকম পোশাক রাখা হয়েছে। এখান থেকে একজন ব্যক্তি পছন্দ মতো একটি পোশাক টাকা ছাড়াই নিতে পারবেন। পোশাকগুলো দেওয়া হচ্ছে রাফা পাঞ্জাবী থেকে।
শুক্রবার (৭ মে) বিকালে এ দোকানটির উদ্বোধন করেন ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ তিয়াসের মা সুরাইয়া পারভীন।
জানা যায়, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকে, দু-বেলা দুমুঠো ভাতের যোগান দেওয়াটাও তাদের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ঈদে নতুন পোশাক কেনাটা দুঃস্বপ্নের মত। কিন্তু নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ জমেনা। এমন ধারণা থেকেই ‘ ঈদ আনন্দ, মানুষের প্রতি ভালবাসা’ নামের ভিন্নধর্মী দোকান খুলেছেন তরুন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শাকিল আহমেদ তিয়াস।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দোকানে আগতদের বিনয়েরসহিত স্বাগতম জানাচ্ছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী। এরপর আগতরা দোকানে থাকা ঈদের পাঞ্জাবী, টি-শার্ট, গেঞ্জি ইত্যাদি ঘুরেফিরে দেখছেন। পছন্দ হলেই স্বেচ্ছাসেবীরা প্যাকেট করে দিচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তেমন কাজও নেই। তাই এমন ভালো কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন তারা।
ভিন্নরকম এমন দোকানের উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ তিয়াস বলেন, নতুন পোশাক ছাড়াতো ঈদের আনন্দ হয় না। করোনায় কর্মহীন মানুষের জন্য পোশাক কেনা সম্ভব নয়। এছাড়াও মানুষ তার নিজ পছন্দের পোশাক পড়তে ভালবাসে। তাই ভিন্নরকম এমন আয়োজন। মানুষ দোকানে আসবে, টাকা ছাড়াই এখান থেকে পছন্দের পোশাক নিয়ে বাড়ি ফিরবে। তিনি আরও বলেন, বিত্তবানদের উচিৎ, ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু একটা করা।
এ বিষয়ে তিয়াসের মা সুরাইয়া পারভীন বলেন, আমার ছেলে সবসময় মানুষের কথা ভাবে। মানুষের জন্য চিন্তা করে। আমার ওর (ছেলের) কার্যক্রমগুলো খুব ভাল লাগে। আমি চাই তিয়াস এমন কার্যক্রম চলমান রাখুক। ওর এমন কাজে আমার সমর্থন থাকবে সব সময়।
এমন ভিন্ন দোকান থেকে টাকা ছাড়াই পোশাক গ্রহণ করা কয়েকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, করোনায় কাজ নেই। নতুন পোশাক কেনার টাকা নেই। এখান থেকে পছন্দ করে পোশাক নিয়েছি। নতুন পোশাক পেয়ে খুব খুশি লাগছে।