কুষ্টিয়ায় ১৯৬৩ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় নির্মিত হয় বাউল সম্রাট লালন শাহের মূল মাজার। ৫৮ বছর পর দেখা মিললো মূল মাজারের পিলারসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ভক্তসারীরা যানান দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় খসে পড়ছে পলেস্তারাও। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।
এই বিষয়ে লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যাই, ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়ির মূল মাজারের উত্তর ও পূর্বপাশের অংশের পিলারে ফাটল ধরেছে । কোথাও কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। এদিকে ফাটলের এ চিত্র দেখা দেওয়ায় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার আগেই তা দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন এখানকার লালন ভক্ত ও অনুসারীরা।
লালন ভক্ত ও অনুসারীরা বলেন, দেশে মহামারি করোনা পরিস্থিতি থাকায় লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়িতে প্রায় দুইবছর কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। তাই মূল মাজারের ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ার চিত্র সামনে আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে হয়নি তেমন সংস্কার কাজও। বড় দুর্ঘটনা ঘটার আগেই তা মেরামতের দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে বিষয়টি লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভক্তরা।
লালন মাজারের খাদেম ফকির মোহাম্মদ আলী শাহ বলেন, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এ মাজারটি। প্রায় ১৫দিন আগে কর্মকর্তারা এসে দেখে গেছেন ফাটলের এ চিত্র। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ করার দাবি জানান তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, এটি শুধু আমার দাবি নয়, এ দাবি পুরো লালন ভক্ত ও অনুসারীদের দাবি।
লালন ফকির ছিলেন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিক। তাঁর গানের মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায় এক বিরল মানব দর্শনের।
লালন শাহ, যিনি লালন ফকির বা লালন সাঁই নামেও পরিচিত, তিনি মৃত্যুর ১২৯ বছর পর আজও বেঁচে আছেন তাঁর গানের মাঝে। তাঁর লেখা গানের কোন পাণ্ডুলিপি ছিল না, কিন্তু গ্রাম বাংলায় আধ্যাত্মিক ভাবধারায় তাঁর রচিত গান ছড়িয়ে পড়ে লোকের মুখে মুখে।
লালন ফকির বিশ্বাস করতেন সব মানুষের মধ্যেই বাস করে এক ‘মনের মানুষ’। আর সেই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় আত্মসাধনার মাধ্যমে। দেহের ভেতরেই সেই মনের মানুষ বা যাকে তিনি ‘অচিন পাখি’ বলেছেন, তার বাস।