সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ায় পুলিশের ভুলে নিরপরাধ গৃহবধূ কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৩৪ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২, ৮:৫০ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় বিনা অপরাধে দিনভর কারাগারে থেকেছেন রোজিনা খাতুন (৩০) নামে এক গৃহবধূ। দৌলতপুর থানার এসআই আলামিন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার ভুলে এমনটি হয়েছে।

শুক্রবার (১১ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর থানায় নেয় পুলিশ। পরে আদালতে প্রেরণ করা হয়। সন্ধ্যার দিকে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ভুক্তভোগী পরিবার ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী রোজিনা আড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাংদিয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ার (বাজারপাড়া) মালয়েশিয়া প্রবাসী নাহারুল ইসলামের স্ত্রী। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি একই গ্রামের ঈদগাহপাড়ার নাহারুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন।

মামলার বাদী সুমন আল মামুন বড়গাংদিয়া গ্রামের সেন্টার মোড় এলাকায় নানার বাড়িতে স্ব পরিবার বসবাস করেন। তার বাবার নাম দুস্তল আলী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর বাঘায়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সুমন আল মামুন ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় বড়গাংদিয়া গ্রামের ঈদগাহপাড়া এলাকার নাহারুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। আদালতে ভুলে অন্য জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। শুক্রবার রোজিনা খাতুন নামের এক আসামিকে জামিন দিয়েছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের (মিরপুর ) বিচারক মাহমুদা সুলতানা তার জামিন দেন।

মামলার আসল আসামি রোজিনা খাতুন বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে আমার বিরুদ্ধে সুমন মামলা করেছে সুমন। গত এক মাস আগে ওই মামলায় জামিন নিয়েছি। আমি এখন ঘরবাড়ি ছাড়া। আমাদের পরিবার এই মামলার জন্য চরম কষ্টে জীবন পার করছে।

ভুক্তভোগী রোজিনা খাতুন বলেন, গত শুক্রবার (১১ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে আমি আমার বাড়িতে বসে ছিলাম। এসময় পুলিশ এসে বলে আপনার নামে মামলা আছে। আপনাকে গ্রেফতার করা হলো। চলেন আমাদের সাথে। এই কথা বলে পুলিশ অফিসার আলামিন আমাকে থানায় নিয়ে যায় ১০টায়। এসময় এলাকার মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পুলিশকে নিষেধ করলেও পুলিশ তাদের কারো কথা শুনেনি। থানায় একঘন্টা রাখে। তারপর আদালতে নিয়ে যায় এবং আসামির ঘরে (কাস্টরি) রাখে। আইনজীবী নিয়োগ দিলে সন্ধ্যার দিকে আমাকে জামিন নিয়ে ছাড়ানো হয়। আমার অপরাধ, আমার নাম রোজিনা। কিন্তু আসল আসামি অন্য রোজিনা।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো দিন মামলা হয়নি। কিন্তু আলামিন দারোগা আমার কোনো কথাই না শুনে ধরে নিয়ে যায়। সেদিন আমার স্বজনরা, আদালতে গিয়ে আমাকে জামিন করে। আমি প্রচন্ড ভোগান্তির শিকার হয়েছি। আমার ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি ক্ষতিপূরণ চাই। আমার সম্মান গেছে। সেজন্য ওই আলামিন পুলিশকে স্বীকার করে যেতে হবে এবং এলাকায় সবাইকে জানিয়ে যেতে হবে যে, ‘আমি অপরাধী না।’ আমি এলাকায় মুখ দেখাতে পারছি না। আমি তার বিচার চাই।

যেদিন পুলিশ ভুল করে রোজিনাকে গ্রেফতার করা হয় সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আড়িয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হামিদুল ইসলাম। হামিদুল ইসলাম বলেন, চেক জালিয়াতির মামলার আসামি বড়গাংদিয়া গ্রামের ঈদগাহপাড়ার রোজিনা খাতুন। কিন্তু শুক্রবার সকালে দৌলতপুর থানার পুলিশ ভুল করে বাজারপাড়ার রোজিনাকে গ্রেফতার করেন। যদিও পুলিশকে আমরা বলেছিলাম যে, ‘এই রোজিনা আসামি না, আসামি হচ্ছে ঈদগাহ পাড়ার রোজি।, কিন্তু স্থানীয়দের কোনো কথা শোনেনি পুলিশ।

রোজিনা খাতুনকে গ্রেফতার করেন দৌলতপুর থানার এসআই আলামিন। বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, গত শুক্রবারে একটা মিসটেক হয়েছে। আপনি ওসি স্যারের সাথে কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ওসি স্যার সব জানে, স্যারকে কল দেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের একজন পেশকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুক্রবার আদালত বন্ধ ছিল। সেদিন আমি ছিলাম না। সেদিন রোজিনা খাতুন নামে যে আসামিকে জামিন দেয়া হয়েছে সে ভুল আসামি কিনা তা আমার জানা নেই। আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জামিন দেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে আইনজীবী মো. ফারুক আলম পান্না বলেন, একই এলাকার একই নামের একজন নারীকে ভুলে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু নির্দোষ নারীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠান পুলিশ। শুক্রবার হওয়ায় সেদিন ওপেন কোর্ট ছিল। ওপেন কোর্টে শুনানি হয় না। এটা এনায়েতের মামলা। সেদিন চেম্বার থেকে তাকে জামিন দেয়। এখন আমার আসামিকে আদালতে পিটিশন দিতে হবে৷ আদালতকে জানাতে হবে যে, ‘সে আসল আসামি নয়।’ তারপর আদালত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, সিআর ওয়ারেন্ট এসেছিল। সিআর ওয়ারেন্টগুলো সেভাবে যাচাই হয়ে আসে না। থানায় জেআর মামলা হলে আমরা যাচাই-বাছাই করতে পারি। কিন্তু সিআর মামলায় কোর্টের অর্ডারে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়, আসামির নাম, গ্রাম ও স্বামী মিলে যাওয়ায় একটি মিসটেক হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা জানতে পেরেছি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর