গ্রামীণ কুসংস্কার আর প্রতিবন্ধকতা কে পেছনে ফেলে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কুষ্টিয়ার মেয়ে ইমা ইসলাম। কেবল সফল স্ত্রী বা মা নন, তীব্র ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্র নিষ্ঠায় নিজ পরিচয়ে ইমা এখন কুষ্টিয়ার অন্যতম সফল সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ।
কুষ্টিয়ার গির্জা নাথ মজুমদার সড়ক, কমলাপুরের মোছাঃ জাকিয়া খাতুনের এক মাত্র মেয়ে ইমা। ইমা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এস,এস,সি ও এইচ,এসসি পাশ করে বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত আছেন।
স্বামী, দুই সন্তান ও মা ভাইকে নিয়ে সুখের সংসার হলেও বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে ইমা ভুগছিলেন আর্থিক সঙ্কটে।
যে ভাবে উদ্যোক্তা জীবনে পা-বাড়ান ইমা,সুখের সংসার বেশ ভালোই কাটছিলো, হঠাৎ করে মহামারী করোনাভাইরাস এসে সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাই। ইমা বলেন আমার স্বামী ছিলেন একজন প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক, আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারনে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়ে যাই, ভাবতে থাকি এভাবে চলতে থাকলে তো না খেয়ে মরা লাগবে। তখন চিন্তা করলাম আমি তো হাতের কাজ জানি, প্রথমে আমি ১,হাজার টাকা মুলধন নিয়ে শুরু করি,আস্তে আস্তে বিভিন্ন জাইগা থেকে কাজের অর্ডার পেয়ে পুঁজি বাড়তে থাকে, বর্তমানে তার ব্যবসায়ের মূলধন বহুগুণে বেড়েছে
নিজস্ব পরিমণ্ডলে তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনভাবে কাজ করে মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর চিন্তা থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা।একজন উদ্যোক্তার প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো স্বপ্ন দেখা। একজন ব্যবসায়ী ও একজন উদ্যোক্তার মধ্যে এটাই পার্থক্য। স্বপ্নবাজ ইমা তার মনের লালিত স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন।
ইমার প্রতিষ্ঠানের নাম বিসমিল্লাহ বুটিকস পয়েন্ট,ও বিসমিল্লাহ লেডিস টেইলার্স , সমাজের কর্মজীবী নারীদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের মূল সিগনেচার নকশিকাঁথা , নকশী চাদর, ওয়ান পিচ-টু পিচ থ্রি-পিচ, নকশি চাদর, থ্রি পিস, স্কার্ট গাউন সহ বাচ্চাদের জন্য সকল প্রকার ড্রেস। শখের নীড় ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ারের মাধ্যমে, চট্রগাম, বরিশাল, ফেনি,চাদপুর,কুমিল্লা, সহ সারাদেশে তার হাতে তৈরি কাজগুলো সাপ্লাই করে থাকেন।
ইমার হাজবেন্ড ঢাকা সাভারের একটি প্রাইভেট হাইস্কুলের ইংলিশ বিভাগের টিচার মোঃ জিনারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিকে ইমার কাজকর্ম পাগলামি মনে হলেও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে আসলেই সফল হওয়া যায়, ইমা তার সফল দৃষ্টান্ত। একজন নারী হয়েও ইমা এখন কুষ্টিয়ার অন্যতম সফল নারী উদ্যোক্তা। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক নারীই এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উৎসাহী হয়ে উঠছে।’
ইমা বলেন, সাফল্য একদিনে আসে না। সাফল্যর জন্য প্রয়োজন সময়, মেধা আর ধৈর্যের। সংসার জীবন হলেও হাল ছাড়েননি পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা আর মেধাকে পুঁজি করে পা বাড়িয়েছি। এই এগিয়ে চলাই আজ তাকে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা অদম্য একজন নারী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে এই সমাজে। ইমা নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ স্বাবলম্বী নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়ে আরও কয়েকজন নারীকে কর্মসংস্থানের পথে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ইমা বলেন, স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। স্বপ্ন, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়।
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কার সহযোগিতা পেয়েছেন? কুষ্টিয়ার সময় প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে, ইমা ইসলাম বলেন, প্রতিটি কাজে আমার স্বামী আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন,তবে আমার মা ও আমার পাশে ছিলেন । সব সময় তিনি আমার পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। তার সহযোগিতায় আজ আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি।