প্রায় ৫শ’ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বসবাস করেন আনুমানিক ৮ লাখ মানুষ। এখানে খাদ্যপণ্য সরবারাহের জন্য পাইকার হাট গুলোর পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খুঁচরা হাট বসে অন্তত দুশো। সাপ্তাহিক এসব হাটের চার ভাগের তিন ভাগই বসে অবৈধ নিয়মে, একারণে একদিকে হচ্ছে না বাজারমূল্য ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে সরকারি ইজারা না থাকলেও হাটে তোলা হয় নিয়মিত চাঁদা, যা ভাগবাটোয়ারা হয় হাট সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে কথাই বলতে চাননি অন্তত ৭টি ইজারা ছাড়া হাট চলা ইউনিয়ন চিলমারীর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের খোদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন তার ইউনিয়নে একটি হাট সরকারি ইজারায় চললেও হাট রয়েছে অন্তত ১২ টি। রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বিশ্বাস জানান, সরকারি ইজারা হাট ছাড়াও তার ইউনিয়নে চলে আরও ৩-৪টি হাট। খলিশাকুন্ডীর চেয়ারম্যান জুলমত হোসেন বলেন, ইজারা ছাড়া কয়েকটি হাট বসলেও এই ইউনিয়নে দুটি হাট রয়েছে সরকারি ইজারা নেয়া। আরেকদিকে, আড়িয়া ইউনিয়নে কেবলমাত্র বড়গাংদিয়া হাট ইজারায় চললেও আরও হাট বসে কমের পক্ষে ৭-৮টি। অন্তত ১০টি হাট নিয়মিত বসলেও ফিলিপনগর ইউনিয়নে একটি হাটও নেই সরকার অনুমোদিত, এমন তথ্য জানান ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক। মরিচা ইউনিয়নের জাহিদুল ইসলাম চেয়ারম্যান বলেন, আগে বৈরাগীর চর হাটসহ দুটি ইজারা দেয়া হাট বসলেও এখন বসে একটি, বাকি হাট বসে আরও ৩-৪টি। দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নে ১০টি হাট বসলেও, কোনটারই নেই সরকারি অনুমোদন। আদাবাড়িয়া ইউনিয়নেও দুটি হাট ইজারা দেয়া, বাকিসব অনিয়মের বলে তথ্য দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাকি। এমন চিত্র ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নেই। চেয়ারম্যানদের বক্তব্যে বলা হাটের সংখ্যার তুলনায় সরেজমিনে দেখা গেছে আরও বেশি সংখ্যা। কোনো-কোনো হাটে আবার পাওয়া যায় অবৈধ পথে আসা ভারতীয় পণ্যও।
জানা গেছে, উপজেলা ব্যাপী ছোটো-বড় হাটের সংখ্যা প্রায় দুশো, যার মধ্যে ১শ’৫০ টিরও বেশি হাট অবৈধ প্রক্রিয়ায় চলছে।
হিসাবের বাইরে চলা হাট গুলোতে সরকারি নজরদারি না থাকায় ভোক্তাদের নিয়মিতই নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়, নেই কোন নাগরিক সুবিধাও, হয় না বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ, এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এমনকি অভিযোগ রয়েছে হাটে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাথেও জোর-জবরদস্তির।
উপজেলাটিতে অনিয়মের হাটে-হাটে গন্ডগোলে পুলিশ পর্যন্তও দৃশ্য পৌঁছাবার রেকর্ডও রয়েছে।
সরকারি ইজারা ছাড়া চলতি হাট প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল ওয়াদুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, যাচাই-বাছাই করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।