শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ায় ওষুধ ব্যবসায়ী হত্যায় লুটপাটে ব‍্যস্ত-তৃতীয় পক্ষ  ক্ষতিগ্রস্তে শিক্ষার্থীরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৯৩ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ৬:৪৩ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর গ্রামে জমি বন্ধকের টাকাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে আব্দুর রাজ্জাক (৪২) নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ী নিহত হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি।এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ওই দিন ২১ জনকে আসামী করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে এলাকার একটি তৃতীয় পক্ষ লুটপাট করতে ব‍্যস্ত।পুর্ব শত্রুতার জের ধরে এলাকার হাজীপাড়ার নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের প্রায় ৫০টি পাকা, সেমি পাকা বসতবাড়ী, ঘরের খাট, সোফা, টিভি, ফ্রিজ, ট্রাক্টর, আসবাব পত্র, স্বর্ণালংকার, মাঠের সরিষা, পিঁয়াজ, কলাবাগান, খেসারী, ইরি ধানের চারা, প্রায় ৮৫ টি বড় ষাড় ও গাভী গরু, ৯০টি ছাগল, ১ শত ৫০ টি ভেড়া লুট এবং আসবাবপত্র ভাংচুর, বসত ঘরে ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। তারা ১০ দিনে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ লুট ও বিনষ্ট করেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।

ঘরের মধ্যে থাকা আসবাবপত্রসহ প্রয়োজন কাগজ পত্র পড়ে আছে ছবি:কুষ্টিয়ার সময় 

এই ঘটনায় হামলাকারীদের হাত থেকে নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, যুবতীরাও রেহাই পাচ্ছে না। তাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে অনেকেই। জনশুন্য শুনশান এলাকাতে পরিণত হয়েছে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর, হাজীপাড়াসহ আশপাশের এলাকা। এ সব বিষয়ে আইনশৃংখলাবাহিনীর কাছে কয়েক দফা নিরাপত্তা চেয়েও কোন লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের সদস্যরা।

এঘটনায় সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে এলাকার ছোট ছোট শিশু ও শিক্ষার্থীরা। জনশূন্য হওয়াতে ক্ষতিগ্রস্তর মুখে কোমলমতি শিশু ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, তিন বছর আগে এলাকার সাবেক মেম্বার জাবেদ আলী ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে জহুরুল ইসলামের নিকট জমি বন্ধক রাখে। পরে বন্ধককৃত জমি টাকা পরিশোধ না করে জাবেদ আলী অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। দুইবছর ধরে টাকা পরিশোধ নিয়ে নানান টালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ পাওনা টাকা নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাক বিতন্ডা সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতা মেম্বার প্রার্থী ছিলেন একই এলাকার আবুল কাশেম। তার নানা অপকর্মের কারণে তাকে পরাজিত করে এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তি এলাকার কৃষক মকবুল বিশ্বাসের পুত্র সজিব বিশ্বাস ওরফে সবুজ জনধারণের ভোটে বিজয়ী হয়। এ ঘটনায় পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ও সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম প্রামাণিক প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ওঠে এবং চরজগন্নাথপুরের হাজী পাড়া ও পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে সবুজ মেম্বার ও তার জ্ঞাতী গোষ্ঠিকে নিঃশেষ করতে মনে মনে ফন্দি আটেন।

এদিকে পাওনা টাকা নিয়ে ঘটনার দিন ২ ফেব্রয়ারি ২০২৩, দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে উভয়পক্ষ (জাবেদ আলী মেম্বার বনাম জহুরুল)। এসময় উভয় পক্ষই দেশীয় ধারালো অস্ত্র, হাসুয়া, ফালা, সড়কি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সংঘর্ষে পড়ে গিয়ে ফালার আঘাতে ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক নিহত হয়। নিহতের চাচা জাবেদ মেম্বার আহত হয়। এদিকে সংঘর্ষের দিন দুই পক্ষকে এমন প্রাণঘাতি সংঘর্ষ এড়াতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বয়োবৃদ্ধ ইদ্রিস আলী বিশ্বাস, মসজিদের ইমাম ও খামার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, মকবুল হোসেন বিশ্বাস, আনিসসহ এলাকার কয়েকজন শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের অনুরোধ জানায়।

হত্যার পরে গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো পাড়ায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম প্রামাণিক পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানান সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ড অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে বলে যানা গেছে।

তার নেতৃত্বে আক্কাচ আলী বিশ্বাস, মোঃ রহমান বিশ্বাস, বকুল বিশ্বাস, শুকুর বিশ্বাস, নাসির বিশ্বাস, জাফর প্রামাণিক, টিপু প্রামাণিক, লিটন প্রামাণিক, জিকু প্রামাণিক, বাসার প্রামাণিক, কাশেম প্রাশাণিক, রইচ প্রামাণিক, ইউসুফ প্রামাণিক, ইউনুচ প্রামাণিক, রাতুল প্রামাণিক, মিলন প্রামাণিক, লালন প্রামাণিক, মিজান প্রামাণিক, আসাদুল প্রামাণিক, নিজাম প্রামাণিক, স্বপন প্রামাণিক, মজিদ কাজী, জিয়া কাজী, রেজাউল কাজী ও আসলাম কাজী।

প্রায় ১শ হামলাকারীরা গত ১০ দিন যাবত হাজী পাড়ার আকরাম বিশ্বাস, মকবুল বিশ্বাস , মৃত রমজান আলী বিশ্বাস, ইদ্রিস আলী বিশ্বাস,সবুজ প্রায় ৫০টি পরিবারের বসত ঘর, গবাদি পশু, পাকা ঘর, মাঠের ফসলের উপর দফায় দফায় হামলা করে তাদের প্রায় ১০ কোটি বা তার ও বেশি টাকার সম্পদ লুট ও বিনষ্ট করেছে। তাদের ভয়ে উক্ত এলাকার শতাধিক পরিবারের পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর এখন ঘর ছাড়া হওয়ায় এলাকাটি জনশুন্যে পরিণত হয়েছে।

রাতের আধাঁরে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ ওহামলাকারীদের এলাকায় এখন অবাধ বিচরণ।এ অবস্থায় নিরাপত্তা চেয়ে আক্কাচ আলী বিশ্বাসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ্য করে কুমারখালী থানায় ক্ষতিগ্রস্থ্য মকবুল বিশ্বাস একটি এজাহার দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মকবুল বিশ্বাসের আত্মীয় জানিয়েছেন, প্রতি রাতে তাদের আতংকে সময় কাটে।পরিবারের ছেলে-মেয়ে নিয়ে তারা এখননিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এলাকায় কেউ যেতে পারছেন না। দফায় দফায় থানায় যেয়ে এজাহার দিয়ে অভিযোগ করেও তারা নিরাপত্তা পাচ্ছেনা। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছে তারা।

এদিকে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মহসীন হুসাইনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখানে তৃতীয় একটি পক্ষ এসব অপকর্ম করছে। ঘটনার সময় যারা এখন অভিযোগ করছে তাদেরকে আমরা বলেছিলাম আপনাদের বাড়ী, গবাদি পশু, মাঠের ফসলের কি নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রতি উত্তরে তারা বলেছিল আমরা সময়মত সরিয়ে ফেলবো। হাতে গোনা কয়েকজন ফোর্স নিয়ে এলাকায় মুভ করাটা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও বিষয়টি আমরা গুরুত্বর সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেব। এলাকায় যাতে কোন প্রকার বিশৃংখলা না হয় সে বিষয়টিও নজরে রাখবো বলে তিনি জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর