শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ায় আ.লীগের অফিসে হামলা, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৮৪ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম: শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রহিদুল ইসলাম বুদু (৫৫) সহ দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের এ হামলার ঘটনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করা হয়েছে। আহতরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার (০২ জুন) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাতবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

আহতরা হলেন – ধরমপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃত রহমত প্রামানিকের ছেলে রহিদুল ইসলাম বুদু এবং একই এলাকার কামাল আলীর ছেলে সুলতান আলী (৪০)।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শরিফুজ্জামান নবাব বলেন, বহুবছর আগে থেকে সাতবাড়িয়া আঞ্চলিক আওয়ামী লীগের অফিসে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বসেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম কুব্বাতের হাতে গড়া সেই অফিসে ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা এসেছিলেন। সেই অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ছিঁড়ে ফেলে এবং ভাংচুর করে। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাতবাড়িয়া গ্রামের মন্ডলপাড়ার জিদান, রাসেল, রাজিব, শাহীন বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে একটা পারিবারিক গানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মাতলামি করে এবং একটা মাইক্রো গাড়িও ভাংচুর করেন। এসময় স্থানীয়রা তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। একপর্যায়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে হঠাৎ করে অতর্কিতভাবে তারা হামলা করেন। আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে জিদান, রাসেল, রাজিব, শাহীন সহ তাদের অসংখ্য লোকজন হামলা করে। এতে ধরমপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রহিদুল ইসলাম বুদু ও আওয়ামী লীগের কর্মী সুলতান আলী গুরুতর আহত হন। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর করে, শেখ মুজিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিঁড়ে ফেলে এবং ভাংচুর করে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করাবো। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

প্রত্যক্ষদর্শী ইয়ানুস আলী বলেন, থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ধরমপুর ইউনিয়ন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে জিদান, রাসেল, রাজিব, আরিফ, শরিফ, শাহীন সহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন রামদা, চাপাতি সহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এসময় তারা আওয়ামী লীগের অফিসে বোমা হামলা করে, ফায়ার করে, জাতিরপিতা শেখ মুজিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাসিনার ছবি ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এসময় তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারপিট করে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় বুদু মেম্বার ও সুলতান কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী চা বিক্রেতা খাকসার আলী বলেন, আমি চা বিক্রি করছিলাম। সন্ধ্যার দিকে ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা করে। তারা মারপিট ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ আসে। তারপর পুনরায় তারা আওয়ামী লীগের অফিসে ঢুকে পুলিশের উপস্থিতিতে বোম মারে, শেখ মুজিবর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে ও অফিসের চেয়ার-টেবিল সহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এসময় তারা আমার চা দোকানে হামলা করে কেটলি, গ্যাসের চুলা, চেয়ার, টেবিল রামনা দিকে কেটে ফেলেছে এবং ভাংচুর করেছে। আমি গরিব মানুষ। তারা আমার অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে একটা গানের অনুষ্ঠানে দু’পক্ষের ঝামেলা হয়। এতে রাজু নামের এক যুবককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের উপর হামলা করা হয়, আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর করা হয়। কে বা কারা তাদের উপর হামলা ও অফিস ভাংচুর করেছে তা আমি জানি না। এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম লালু ও তার লোকজন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম চুন্নু এবং ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম লালুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেন নি।

এবিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, আমি এলাকার বাইরে ছিলাম, আমার মোবাইল সাইলেন্ট ছিল। আমি এইমাত্র শুনলাম কিছু একটা ঘটেছে। এই ঘটনা সম্পর্কে আমি এখনও বিস্তারিত জানিনা।

এবিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। কাউকে আটক করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনার পরপরই ভেড়ামারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর